আঁধার কেটে যাবে, আলো আসবেই

মায়ের একমাত্র কন্যা সুবর্ণার দুটি চোখ অন্ধ। অদম্য মেধাবী সুবর্ণা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুবর্ণা বন্ধুসভার বন্ধু। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান ও কবিতা আবৃত্তি করে। রাজবাড়ী বন্ধুসভার উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক শামীমা মুনমুন মুঠোফোনে তাকে এক হাজার টাকা বিকাশ করেন। ফোন পেয়েই উচ্ছ্বসিত সুবর্ণা জানায়, ‘আমি জানতাম ঈদের আগে ম্যাম ফোন করেছেন মানেই কোনো উপহার। খুব ভালো লাগছে। বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ।’

কলেজপাড়ার জরিনা খাতুনের হাতে ৫০০ টাকা তুলে দেন রাজবাড়ী বন্ধুসভার সভাপতি অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান। আপ্লুত জরিনা খাতুন বলেন, ‘ঈদ চলে এল, এখনো কেউ সাহায্য দেয়নি। আপনি নগদ টাকা দিলেন। ঈদের দিন ছেলেমেয়ের মুখে খাবার দিতে পারব। আল্লাহ আপনাদের ভালো করুক।’

একজন গানের শিক্ষক। টিউশনই তাঁর আয়ের উৎস। কিন্তু করোনার কারণে টিউশনি বন্ধ। অভাবে আছেন। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় বন্ধুসভার সহায়তা। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভা আসলেই সবকিছুতে প্রথম। বন্ধুসভার বন্ধুরা আসলেই মানুষের বন্ধু।’

এমন অনেক গল্প আছে। রোজার শুরুতেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম শিশুদের রঙিন জামা উপহার দেওয়ার। সঙ্গে যোগ করা হয় ওষুধ ও খাবার। কেনাকাটার মূল দায়িত্ব পালন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিদয় খান। তাঁকে সহযোগিতা করেন বন্ধু নাহিদুল ইসলাম, শেখ ফয়সালসহ আরও কয়েকজন।

আমাদের প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ করার পর জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় মুঠোফোনে আর্থিক সহায়তা করার। সভাপতি মো. নুরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি শামীমা মুনমুন ও প্রথম আলো প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে আবারও তহবিল সংগ্রহ করা হয়। তালিকা ধরে মুঠোফোনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পৌঁছে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা।

করোনাকালে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারব কি না, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ছিল। কিন্তু বন্ধুসভার বন্ধুরা সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবার আন্তরিক সহযোগিতার কারণে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। আগামীতেও আমাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। একদিন করোনাকালের আঁধার কেটে যাবে। আলো আসবেই।

শুভ চন্দ্র সিংহ: সাধারণ সম্পাদক, রাজবাড়ী বন্ধুসভা।