আবদারের জায়গা

আমার বয়স তখন সাড়ে চার বছর। কেবল স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। আমার কাছে স্কুলে যাওয়া মানেই ছিল বাবার হাত ধরে হেঁটে যাওয়া। স্কুলের পাশে যে হোটেল ছিল, সেখানে আমরা নাশতা করতাম। আব্বু আমাকে সব সময় খাইয়ে দিতেন।

টিফিন কেনার জন্য আমার হাজারো বায়না বাবা মেনে নিতেন। আমাকে স্কুলগেটের ভেতরে দিয়ে তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আবার ছুটি শেষে গেটের বাইরে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম। এমন করেই বছরগুলো পার করছিলাম।

আমার এখনো মনে আছে, এক দিন আমার খুব জ্বর হয়েছিল। তখন মোটামুটি বড় হয়েছি। কিন্তু ওষুধ খেতে খুব ভয় পেতাম। বাবা আমাকে জোর করে ট্যাবলেট খাওয়াতে লাগলেন। আমি না খাওয়ার জন্য খুব জেদ ধরেছিলাম। বাবা আমাকে ধমক দিয়ে অবশেষে সফল হয়েছিলেন। সে কি অবস্থা!

বাবা মানেই আমার কাছে ছিল আবদারের জায়গা। তাঁর কাছ থেকে বকা খুব কম খেয়েছি। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি, তখন বাবা বিদেশ চলে যান। খুব ধাক্কা খেয়েছিলাম তখন। বাবাকে ছাড়া বিদ্যালয়ে যাওয়া আমার কাছে খুব কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। যখন হোটেলে খেতে বসতাম, অন্যদের খাইয়ে দিত তাদের বাবা। আমার খুব কষ্ট হতো, কান্না পেত।

বাসায় এসে কষ্টগুলো লিখে রাখতাম। বাবাকে আমার চিঠি লেখার অভ্যাস ছিল। বাবাকে চিঠি লিখতে বসলে মনে হতো, বাবা আমার পাশেই আছে। কিন্তু কখনো সে চিঠি পাঠানো হতো না।

বাবার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়ার অনেক ঘটনা আছে। আমি বাসে উঠলেই ঘুমিয়ে পড়ি। আর পাশের সিটে বসে বাবা আমাকে পাহারা দেন।

বাবার সঙ্গে আমার অনেক গল্প করি। গল্পের বিষয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন। আমার বিদ্যালয়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের গল্প করি। আমি ভবিষ্যতে কী করতে চাই, সেগুলো নিয়ে বলি। আবার কখনো খেলাধুলা বা রাজনৈতিক বিষয়েও আলোচনা করি।

বাবার সঙ্গে আমার সরাসরি কথা খুব কম হয়েছে। আজ ১৩ বছর হলো বাবা বিদেশে। যখন দেশে আসেন, বেশির ভাগ সময় আমি তখন হোস্টেলে থাকি। বাবার সঙ্গে আমার সরাসরি কথা না হলেও ভার্চ্যুয়ালি আমাদের বাবা–মেয়ের এখনো গল্পের জুড়ি নেই।

শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়