একজন সুপারম্যান

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

প্রত্যেক সন্তানের কাছেই তার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমার কাছেও তাই। বাবা মানে সব আবদারের অফুরন্ত এক ভান্ডার। বাবা মানে মাথার ওপর এক বটবৃক্ষ। আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি, বাবার সঙ্গে তাদের বোধ হয় একটু বেশিই মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

আমাদের পরিবারে ৬ জন সদস্য। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি আমার বাবা। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, কঠোর পরিশ্রম করে বাবা আমাদের ভরণপোষণ করে আসছেন। ডিঙি নৌকার মতো বইঠা বেয়ে একাই সংসার নদী পাড়ি দিচ্ছেন। অথচ তাঁর কোনো ক্লান্তি নেই। নেই কোনো বিশ্রাম। আমাদের সব আবদার পূরণ করতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। বাবার যে গুণটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে, সেটা হলো সততা। বাবা সব সময় সৎ জীবন যাপন করার চেষ্টা করেন। আমিও তাঁকে অনুসরণ করি। বাবা বলেন, জীবনে যত বিপদই আসুক না কেন, সততার সঙ্গে সব মোকাবিলা করবে।

বাবা খুব কঠিন প্রকৃতির মানুষ হলেও ভেতরটা শিশুর মতো নরম। তিনি যতটা না শাসন করেন, তার চেয়ে ঢের বেশি আদর করেন আমাকে। বাবা যখন রেগে যান, তখন আমি চুপ করে থাকি। আমি জানি, হাজার বকা দিলেও বাবা আবার আমায় কাছে ডেকে নেবেন। তবে যেদিন খুব বেশি রেগে যান, সেদিন আমিও চালাকি করে বেঁচে যাই।

একদিন বাড়ি ফিরতে খুব রাত হয়ে যায়। মা বলল, ‘তোর বাবা তো রেগে আছে।’ ভাবলাম, আজ আর রক্ষা নেই। আমি চোরের মতো ঘরে ঢুকে দেখি বাবা টিভিতে খেলা দেখছেন। সেই সুযোগে বাবা কিছু বলার আগেই টিভির সামনে দাঁড়িয়ে আমি গড়গড় করে বলতে লাগলাম, আজকে তো বাংলাদেশের খেলা, না বাবা? মাশরাফি খুব বাজে খেলছে আজ। মনে হয় নিউজিল্যান্ড জিতবে। বাবা বললেন, ‘আরে নাহ বোকা! দেখিস, বাংলাদেশই জিতবে। ওভার তো মাত্র শুরু হয়েছে।’ এভাবে কথা বলতে বলতে আমি বাবার সামনে থেকে কেটে পড়ি। বাবা কোনো দিন আমার গায়ে হাত তোলেননি। তবে কোনো ভুল করলে এখনো অনেক ধমক খেতে হয়।

আমি আমার সম্পর্কে যতটা না জানি, তার চেয়ে বেশি জানে বাবা। তিনি আমার চাহিদা কী করে জানি বুঝে ফেলেন। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে। গাইডসহ বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতাম। গরমের দিনে হাতে ঘাম হওয়ায় বইয়ের মলাট ছিঁড়ে যেত। একদিন সকালে উঠে দেখি, বিছানার পাশে একটা নীল রঙের স্কুলব্যাগ। বড় আপু বলল, গতকাল রাতে বাবা আমার জন্য এই স্কুলব্যাগটা কিনে এনেছেন, যাতে আর হাতে করে বই নিতে না হয়। সেদিন যে কী আনন্দ হয়েছিল! সেটা বলে বোঝাতে পারব না।

আমার বাবা সবচেয়ে কম ঘুমান, কম খান, বাজারের সবচেয়ে কম দামের শার্ট পড়েন। কিন্তু পরিশ্রম করেন সবচেয়ে বেশি। আমাদের চাহিদার কোনো কমতি রাখেন না। বাবা জীবনে এত ত্যাগ, সংগ্রাম করছেন শুধু আমাদের জন্য। বাবা আমার কাছে একজন সুপারম্যান। কিন্তু বাবাকে আজও জড়িয়ে ধরে বলা হলো না, বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব খুব ভালোবাসি।

রিফাত ইসলাম: সহসভাপতি, কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভা