এক পৃথিবী ভালোবাসা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

ছোটবেলা থেকেই বাবাকে শুধু ছুটতে দেখেছি৷ একবিন্দু পরিমাণও বিশ্রাম নিতে কখনো দেখিনি৷ বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক৷ আর মা–ও ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা৷ আমরা তিন ভাইবোন৷ শৈশব থেকে দেখতাম বাবা আমাদের আগলে রাখতেন৷ নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের আর দশটা বাবার মতোই আমার বাবার চোখেও ছিলো স্বপ্ন৷ সে স্বপ্ন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে৷ গ্রামের এক অজপাড়াগাঁয়ে থেকেও বাবা আমাদের শেখাতেন ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷

বাবা আমাদের জন্য পত্রিকা নিয়ে যেতেন৷ সব খুঁটিনাটি পড়াতেন৷ এখনো মনে পড়ে, এত্ত বড় একটা বাংলাদেশের ডায়েরি নিয়ে গিয়েছিলেন৷ আমাদের সব সাধারণ প্রশ্ন পড়তে দিতেন৷ এই ছোট বয়সেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, পতাকা সম্বন্ধে জানার কৌতুহল সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন৷ এই আমার বাবা৷

বাবা বলতেন, আমি তোমাদের টাকা, সম্পত্তি দিয়ে যাব না৷ তোমরাই আমার সম্পদ৷ বাবাকে কখনো দেখতাম না ভালো কোনো শার্ট পড়তে৷ কিন্তু পূজা এলে আমাদের নতুন কাপড় কেনার জন্য বাজারে নিয়ে যেতেন৷ দোকানে বসে আমাদের জন্য কাপড় বাছাই করতেন, পছন্দ হলে গায়ে জড়িয়ে মেপে দেখতেন, আজ সবই মনে পড়ে৷

আজ আর বাবা দোকানে নিয়ে গিয়ে কাপড় কিনে দিতে পারেন না৷ বাবাকে নীল শার্টে অনেক সুন্দর লাগে৷ আজ আমিই বাবার জন্য দোকানের সবচেয়ে নীল শার্টটা কিনি৷ শার্টটা দেখেই বাবা হেসে ওঠেন ছোট ছেলের মতো৷ বাবার মুখের এই হাসিটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়৷

স্কুল থেকে ফিরে বাবা সন্ধ্যায় আমাদের তিন ভাইবোনকে পড়াতে বসাতেন৷ ভাইবোনদের মধ্যে আমিই ছিলাম সবচেয়ে ডামিশ অর্থাৎ কম মেধাবী৷ বাবার সেই কম মেধাবী মেয়েটাও আজ প্রধান শিক্ষক৷ গত বছর সেই মেয়ে আবার ফটিকছড়ি উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হয়৷ জেনে বাবা হাসেন।

প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একবার হলেও বাবা ফোন করেন। অনেক বেশি ভালোবাসি বাবা তোমায়।