ফরিদপুরে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে বন্ধুসভা

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ফরিদপুরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। গতকাল গোপালপুর ঘাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ফরিদপুরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। গতকাল গোপালপুর ঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

পদ্মার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা অদ্ভুত। পদ্মা একবার ঘরবাড়ি সব ভেঙে নেয়। তাঁরা আরেক চরে গিয়ে ঘর বাঁধেন, ফসল ফলান। পদ্মাকে ঘিরেই চলে জীবন। এভাবেই চলে আসছে বহু বছর ধরে। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর গোপালপুরের বাসিন্দা আছিরন বেগমের (৪৯) ঘর সর্বশেষ নদীতে বিলীন হয় বছর পাঁচেক আগে। স্বামী নেই। ছেলে কৃষিকাজ ও দিনমজুরি করে সংসারটা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু করোনাকালে আর পেরে উঠছিলেন না। এর মধ্যেই বন্যার পানিতে ছেলের চাষের খেত, ঘরদোর সবই ডুবেছে। দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট।

গতকাল রোববার সকালে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর তীরে গোপালপুর ঘাটে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণসামগ্রী নিতে এসেছিলেন আছিরনের মতো বন্যাদুর্গত ১০০ নারী ও পুরুষ। পদ্মার ভাঙন, করোনাকালের কর্মহীনতা এবং সাম্প্রতিক বন্যায় তাঁদের সবাই কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন।

ত্রাণের প্যাকেটটা হাতে পেয়ে আছিরন বললেন, ‘ঘরবাড়ি নদীতে ভাইঙ্গা যাওয়ার পর পদ্মা নদীর চরে ঘর তুইলা থাকি। নদীতে পানি বাড়লে আমরাই আগে ডুবি। আমাগো জন্যে কেউ কিছু করে না, খবরও রাখে না।’

চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর ওপারে অবস্থিত। গত শুক্র ও শনিবার প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা ট্রলারে পদ্মা পার হয়ে চর গোপালপুর ও লস্করকান্দি গ্রামে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বন্যাদুর্গত দুস্থদের তালিকা করেন। তাঁদের একটি করে চিরকুট (স্লিপ) দিয়ে আসেন বন্ধুরা। গতকাল ওই দুটি গ্রামসহ সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের লোকদের ত্রাণ দেওয়া হয়। বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের আমেনা শেখ (৫৪) জানান, তাঁর স্বামী মারা গেছেন অনেক বছর আগে। সংসারে তিনি, ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি। ছেলে অসুস্থ বলে কাজ করতে পারেন না। এত দিন কোনোভাবে আধা পেট খেয়ে বেঁচে ছিলেন। ঘরে জমানো চাল শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল কী খাবেন, তারই কোনো ঠিক ছিল না। এর মধ্যেই প্রথম আলো ট্রাস্টের রিলিফ পেয়ে কয়েক দিনের জন্য চিন্তামুক্ত হলেন বলে জানান।

লস্করডাঙ্গী গ্রামের কৃষক রবিউল মণ্ডল (৫২) বলেন, ‘২০ দিন ধরে পানিবন্দী আছি। ঘর থেকে বের হতে পারি না। সব জমি তলায় যাওয়ায় কোনো কাজ নাই। পাঁচজনের পরিবার নিয়া মড়ার মতো বাঁইচা আছি। এর আগে কেউ আমাগো কোনো খোঁজ নেয় নাই। খাওনের কষ্ট পাইতেছিল বাচ্চাগুলা। প্রথম আলোর চাল-ডাল দিয়া কয় দিন খাইতে পারুম।’

বন্যাদুর্গত প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় চাল, আলু, লবণ এবং ডালের একটি করে প্যাকেট। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চরভদ্রাসন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিলাল হোসেন, ওই কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমান, চর ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক বিশ্বাস, ফরিদপুর বন্ধুসভার সহসভাপতি সুজিত কুমার দাস প্রমুখ।