স্মরণকালের দীর্ঘ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের জীবন

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ১০০ জন বানভাসির মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেন সরিষাবাড়ী বন্ধুসভার সদস্যরা। ঈদের আগের দিন উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর শিশুয়া গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ১০০ জন বানভাসির মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেন সরিষাবাড়ী বন্ধুসভার সদস্যরা। ঈদের আগের দিন উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর শিশুয়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা বা ধরলাপারের মানুষের কাছে বন্যা নতুন কিছু নয়। তবে এবারে করোনাকালে কর্মহীনতার মধ্যে এসেছে বন্যা। স্মরণকালের দীর্ঘ এই বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর শিশুয়া গ্রামের ৬৯ বছর বয়সী হামিদা বেগম দুই মাস ধরে পানিতে ডুবে আছেন। বয়স আর রোগশোকে অনেকটাই ক্লান্ত। চলাফেরা করাও অনেকটা কঠিন তাঁর জন্য। তার মধ্যে টানা দুই মাস ধরে বানে ভাসছেন। বানের মধ্যে খাবারেরও সংকট, নিয়মিত তিনবেলা খাওয়া হচ্ছে না।

ঈদের আগের দিন গত ৩১ জুলাই সাতপোয়া ইউনিয়নের ১০০টি বানভাসি পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। সেখানে আরও অন্যদের সঙ্গে এসেছিলেন হামিদাও। ত্রাণ পেয়ে তিনি বললেন, ‘দুই মাস ধইর‌্যা ঘরের মইদ্যে পানি। খুব কষ্টে আছি বাবা। মাইনষের বাড়ি বাড়ি চাইয়্যা খাই। এহন তো সবার বাড়িতেই পানি। একবেলা খাইলে দুইবেলা না খাইয়্যাই থাহি।’

সরিষাবাড়ী উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই ইউনিয়ন। পুরো ইউনিয়নের চারদিকে কেবল পানি আর পানি ছিল। অনেক ঘরবাড়ি তখনো পানির নিচে। রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। পানির স্রোতে রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাটবাজারগুলো। নৌকা অথবা কলার ভেলাই তাঁদের প্রধান বাহন। বানের ধাওয়ায় অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া। টানা দুই মাস এখানে-ওখানে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে বানভাসিদের। এমন অবস্থায় ঘরের খাবারে টান পড়েছে।

ত্রাণসহায়তা পেয়ে চর শিশুয়া গ্রামের আবদুল্লাহ আকন্দ (৬২) বলেন, ‘কত দিন ধইরে পানির মধ্যে আছি, কেউ আমাগো খোঁজ নেয় নাই। কাজকাম নাই, ঘরে বইসা থাহি।’

কৃষক আবতাব আলীর ফসল সবই ডুবেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত লম্বা বান যাইতাছে। কত কষ্ট করলাম। কইডা চিড়া-মুড়ি ছাড়া, কেউ কিছু দিল না।’

 বানভাসিদের ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয় চাল, তেল, ডাল, আলু ও পেঁয়াজ। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণে যোগ দেন প্রথম আলোর যুগ্ম ফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন, সরিষাবাড়ী বন্ধুসভার উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম, সভাপতি আলাদিন আল আসাদ প্রমুখ।

কুড়িগ্রামে ত্রাণ বিতরণ

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ৩০ জুলাই কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আইরমারির চরে দেড় শ মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয় ডাল, আলু, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেল, চিনি, চিড়া, গুড় ও সাবান।

ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দেখা গেল পুরো চরই পানিতে ডুবে রয়েছে। এক টুকরা শুকনো জমিও নেই কোথাও। তীব্র খাবারের সংকটে দিনে একবেলা খেয়ে থাকার কথা জানালেন অনেকে।