এখনো অনেক গ্রাম পানিবন্দী, ঘরে ঘরে খাবারের সংকট

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার দশগাঁও নওয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে।  ছবি: আনিস মাহমুদ
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার দশগাঁও নওয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে। ছবি: আনিস মাহমুদ

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা সিলেটের গোয়াইনঘাট। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পাহাড়ি ঢলের তিন দফা বন্যায় বিপর্যস্ত এখানকার মানুষের জীবন। ঘর থেকে পানি নামলেও এখনো অনেক গ্রাম পানিবন্দী। কাজ নেই অনেক দিন ধরেই। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট।

গোয়াইনঘাট উপজেলার হাওর ও নদীতীরের পানিবন্দী ১০০টি পরিবারকে গতকাল রোববার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। এর আগে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি দল গোয়াইনঘাটের প্রত্যন্ত এলাকার ১০০টি পরিবারের তালিকা তৈরি করে। এই তালিকার পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে নারী ও পুরুষেরা গতকাল দুপুরে দশগাঁও-নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁদের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। পরিবারপ্রতি ত্রাণের প্যাকেটে ছিল চাল, তেল, ডাল, লবণ, পেঁয়াজ ও আলু। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ মতিন, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি তামান্না ইসলাম প্রমুখ। প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে প্রকৃত দুর্গতদের পাশে গিয়ে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার কার্যক্রমকে অভিনন্দিত করে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম আলো বাংলাদেশের একটি আলোকিত গণমাধ্যম। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগগুলোও আলোকিত। দেশজুড়ে বন্যার্তদের ত্রাণসহায়তাসহ নানাবিধ কার্যক্রম তৃণমূলের মানুষকে সহায়তা করছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক।’

ত্রাণ নিতে আসা লামাপাড়ার বাসিন্দা শ্রমজীবী আলী হোসেন পাথর কোয়ারিতে কাজ করতেন। কোয়ারির কাজ বন্ধ থাকায় তিনি হাওর ও বিলে মাছ শিকার করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। আলী হোসেন বলেন, ‘আমরারে খোঁজ কইরা আইনা সাহায্য দিছইন, এইটা মেহমানদারির মতো। আপনারার লাগি আমরার দোয়া রইল।’

রানীগঞ্জ গ্রামের দিনমজুর নূর মিয়ার ঘরে তিন দফা বন্যার প্রতিবারই হাঁটুসমান পানি ছিল। দ্বিতীয় দফার বন্যায় চার ছেলেমেয়ের পরিবারকে নিয়ে দুই দিন আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও শুধু একবার সরকারি ত্রাণসহায়তা পেয়েছিলেন জানিয়ে নূর মিয়া বলেন, ‘বেমারের (করোনাভাইরাস পরিস্থিতি) সময় বানে আমরারে পথও বইয়াই দিছে। কামকাজ ছাড়া আছলাম। অখন টুকটাক কাম করি। ই-রুজি দিয়া সংসার চলার মতো না। আমরারে মাসে মাসে সাহায্য না করলে চলা দায়।’

দিনমজুর স্বামীকে হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন কলমতলা গ্রামের ছায়না বেগম। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যায় হাঁস-মুরগি আগলে রাখতে পানিবন্দী অবস্থায় ঘরে বসবাস করেছিলেন। বন্যা শেষে ১২টি হাঁস ও ৬টি মুরগি বিক্রি করে দেন। ছায়না বলেন, ‘আর ফিরা একবার ফানি (বন্যা) আয়। ই-ফিরা তিন তিনবার ফানি। আমরা নলতল বাইরার মইধ্যে আছি। কম-বেশি যেকোনো সাহায্য আমরার লাগি বড় উপকারের।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা