কফির দাগ

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।


ভিড় গেটে খুব সাবধানেই বাইক নিয়ে ঢোকে অর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর বাইকস্ট্যান্ডে কোনোরকমে বাইকটা স্ট্যান্ড করে হন্তদন্ত হয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে ফার্স্ট ইয়ারের ইকোনমিকসের ক্লাসে ঢোকে। অফ পিরিয়ড, ক্লাসে কয়েকটা বেঞ্চ অন্তর পাঁচ–ছয়জন জটলা করে বসে আছে। সব জটলায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ক প্রবালকে দেখতে পায়। প্রবাল জানালার দিকে মুখ করে সিগারেটে পরম সুখটান দিচ্ছে। সায়ন্তনী প্রবালের পিঠে হেলান দিয়ে বসে মুঠোফোন ঘেঁটে যাচ্ছে। ওদের দেখেই অর্ক হেঁকে ওঠে, ‘ওয়ে প্রবাল, শিমুলকে দেখেছিস? আজ এসেছে? সকাল থেকে ফোন করছি, ফোন তুলছে না।’
অর্ককে দেখেই সায়ন্তনী ঠিক হয়ে বসে। বিস্ময়ের স্বরে বলে ওঠে, ‘ও মা! অর্কদা, কত দিন বাদে! কেমন আছ? আর তো আসোই না...।’
‘কেন নেকুসুন্দরী? প্রবালে তো সেঁটে আছ। আমি এসে কী করব? শিমুল কই?’
‘তুমি না যা–তা অর্কদা, আমি তো খালি খোঁজ নিচ্ছিলাম, এমন করে কেন বলছ? তোমার শিমুল কি অফ পিরিয়ডে ক্লাসে থাকে কখনো? দেখোগে নিশ্চয়ই মাঠে বল পেটাচ্ছে।’
‘তোর সঙ্গে সকালে দেখা হয়েছে?’
‘হ্যাঁ, একসঙ্গেই বাসে এলাম আজ।’
প্রবাল উঠে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করতেই অর্ক বলে ওঠে, ‘তুই আবার কষ্ট করে দাঁড়ালি কেন?’
‘অর্কদা, শিমুলের ফোনটা সার্ভিসিংয়ে দিয়েছে। আজই ফোনটা পাওয়ার তারিখ। এই দেখো, আমাকে স্লিপ দিয়ে গেছে ফোনটা আনার জন্য।’
‘তবে আর কী! হয়ে গেল! পাগলিটাকে খুঁজতে আমার দম বেরিয়ে যাবে’—বলে অর্ক ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল।

মাঠে গিয়ে বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হলো না, ছয়–সাতজন ছেলের সঙ্গে শিমুল বাস্কেটবলের কোর্টে বল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কাউকে বলে হাত দিতে দিচ্ছে না। ছেলেগুলো শিমুলের পেছন পেছন হই হই করে দৌড়াচ্ছে। অর্ক এতটা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে শিমুলকে জোরে ডাক দেয়। শিমুলের কোনো হুঁশ নেই, খেলায় মত্ত। তার মধ্যে একটা ছেলে শিমুলকে ডেকে দেয়। শিমুল মুখ ঘুরিয়ে দেখে অর্ক হাত নেড়ে ডাকছে। সেই অসাবধানে একটি ছেলে বল কেড়ে নিয়ে দৌড়ে প্রতিপক্ষের নেটে বল চালান করে দেয়। শিমুল আঙুল উঁচিয়ে ছেলেটির সঙ্গে ঝগড়া করতে যায়। তখনই অর্ক আবার হেঁকে ওঠে, ‘শিমুল, তুই কি আসবি, না আমি চলে যাব?’
অগত্যা শিমুল ছেলেটির দিকে কটমট করে তাকিয়ে কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে।
‘কী করো না অর্কদা, ভাল্লাগে না। আমার ১০ পয়েন্ট হয়ে গিয়েছিল, তোমার জন্য আর একটা পয়েন্ট হারালাম। কবে এলে তুমি বেঙ্গালুরু থেকে? গত রবিবার ফোনে বললে দুমাসের মধ্যে কলকাতায় আসবে না, এখন এলে যে বড়?’

শিমুলের মুখের কথা শেষ হতে না হতেই অর্ক মৃদু ধমকে ওঠে, ‘তুই কি সারা দিন ছেলেদের সঙ্গে এই রোদের মধ্যে বাস্কেটবল খেলে যাবি? সকাল থেকে কতবার ফোন করেছি জানিস?’

‘তা কেন? আমি তো পড়াশোনাও করি। ফার্স্ট সেমিস্টারে আমি ক্লাসের সবার মধ্যে টপ করেছি, সেটা তুমি ভুলে গেলে?’ শিমুল গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘ওরে আমার গালফোলা কৃষ্ণকলি (অর্কর আদরের ডাক)। অনেক তো বল পেটালে, এবার বিয়ে করবে তো, নাকি?’

‘বিয়ে! এত তাড়াতাড়ি! আমার তো এখনো মাস্টার্স শেষ হয়নি। পাস করে চাকরি করব। তারপর তো বিয়ে।’

‘এই দেখ, প্রেম যখন করেছিস, তখন বিয়ে করতে ক্ষতি কী আছে? বিয়ের পর পড়াশোনা শেষ করে আমার সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে চলে আসবি, আমি তোর চাকরি জোগাড় করে দেব ওখানে। এখন তো আর আপত্তি নেই তোর নিশ্চয়ই?’

‘এই অর্কদা, তুমি হঠাৎ এত বিয়েপাগলা হলে কেন? আমাকে ছেড়ে আর থাকতে পারছ না বুঝি?’

‘ভাও নিচ্ছিস? প্রেম করতে গেছিলি কেন আমার সঙ্গে, বিয়ে করার ইচ্ছে নেই যদি?’

‘আমি একবারও বলেছি বিয়ে করব না? বিয়ে করার একটা সময় তো থাকে, বাবা! বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে বলছ, চল ছুড়ি বিয়ে করি?’

‘শিমুল, গত পরশু ছোট কাকি ফোন করে জানায় মায়ের নাকি শরীর খুব খারাপ, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাকে শরীর খারাপের খবর জানাতে মা নাকি বারণ করেছে। কিন্তু মা প্রায় বিছানা নিয়েছে বলে ছোট কাকি বাধ্য হয়েই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে।
‘আমি তখনই একগাদা টাকা গচ্চা দিয়ে ফ্লাইটের টিকিট করে কাল রাতে কলকাতায় এসে পৌঁছলাম। এসে দেখি মা খোশমেজাজে তেলে ভাজা মুড়িসহযোগে ছোট কাকি ও বড় জেঠিমার সঙ্গে বসে ওই বস্তাপচা বাংলা সিরিয়ালের বাপের দশটা বিয়ে দেখছে। দেখেই আমার মাথায় জাস্ট আগুন জ্বলে ওঠে। বাড়িতে রাগারাগি শুরু করে দিই। তখন মা হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করে দেয়। অনেক কষ্টে তার কান্না থামাই। তারপর আমার হাতে পাঁচটা মেয়ের ছবি ধরিয়ে দিয়ে বলে, এর মধ্যে যেকোনো একজনকে আমার পছন্দ করতে হবে বিয়ের জন্য। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, মেয়ে খুঁজতে হবে না, আমার জন্য মেয়ে ঠিক করা আছে। বলতেই বাড়ির সবাই এ–ওর দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করে দেয়। আমাকে জানিয়েছে তারা তোকে সামনাসামনি দেখতে চায়। তাই সকাল থেকে তোকে ফোন করে চলেছি। বুঝতে পারলি পাগলি?’

‘তা আমাকে এখন কী করতে হবে?’

‘কী আর করবি? শাড়ি পরে আমার মা-জেঠিমার সঙ্গে দেখা করতে যাবি।’

‘শাড়ি! আমি তো কোনো দিন শাড়ি পরিনি। কে পরিয়ে দেবে? আমার তো মা নেই যে শাড়ি পরিয়ে, সাজিয়ে–গুছিয়ে আমায় শ্বশুরবাড়ি পাঠাবে। চলো এখান থেকে, আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, বড্ড রোদ লাগছে, খিদেও খুব পেয়েছে।’

‘এতক্ষণ যে রোদে বল পেটাচ্ছিলি, তখন রোদ লাগেনি? আমি এলেই তোর যত বাহানা। যা, আসতে হবে না। কোনো একটা ছবি পছন্দ করে কালকের ফ্লাইটে ফিরে যাচ্ছি আমি।’ বলেই পা চালায় অর্ক।

‘এই, এই অর্কদা, রাগ করে যাচ্ছ কোথায়?’ শিমুল দৌড়ে এসে অর্কর কনুই জাপটে ধরে নিজের ঘেমো মুখটা অর্কর হলুদ টি–শার্টে আরাম করে মুছে নেয়। ‘চলো খুব খিদে পেয়েছে, ক্যানটিনে যাব না, বাইরে কোথাও চলো।’


পরের দিন সায়ন্তনীর বাড়ির গেটের বাইরে অর্ক বাইক নিয়ে অপেক্ষারত, শিমুল সায়ন্তনীর বাড়ি থেকে শাড়ি পরে সেজেগুজে অর্কর সঙ্গে যাবে। মিনিট তিনেকের মধ্যে হলুদ জামদানি পরা শিমুল অর্কর সামনে এসে দাঁড়ায়। শ্যাম্পু করা খোলা চুলে শ্যামবর্ণা শিমুল অনন্যা রূপে ধরা দেয় অর্কর চোখে। অর্কর চোখের কালো তারায় যেন হাজারো ভালো লাগা জোনাকির মতো ঝিকমিক করে ওঠে।

‘উফ্! তোকে তো আজ ফাটাফাটি লাগছে কৃষ্ণকলি।’ শুনেই শিমুল যেন লজ্জা পেয়ে যায়।
‘আরিব্বাস! তুই আবার লজ্জাও পেয়ে গেলি দেখছি! মা-জেঠিমা একেবারে ইমপ্রেসড হয়ে যাবে। আমার মা–জেঠিমা লাজুক সুশীলা বউ খুঁজছে। তুই কিন্তু ভুলেও বলবি না মাকে যে তুই ইউনিভার্সিটিতে বল পেটাস। মানে তোর বাস্কেটবল আর ক্রিকেট খেলার কথা জানাবি না।’

অর্কর স্বগতোক্তি শুনে শিমুল কেমন যেন উদাস হয়ে গেল। ছোটবেলা থেকেই শিমুলের খেলাধুলার প্রতি ভীষণ আগ্রহ। ক্রিকেট, বাস্কেটবল সব কটিতেই সমান দক্ষ সে। তা ছাড়া বাবার প্রত্যক্ষ সমর্থন আছে বলেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহটা নিজের অজান্তেই বেড়ে গিয়েছিল। শিমুল যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, তখন শিমুলের মা ক্যানসারে মারা যান। সে সময় মায়ের মৃত্যুর শোকে পাথর শিমুল নিজেকে প্রায় গৃহবন্দী করে ফেলে। অনিয়মিত স্কুলে যাওয়ার ফলে ক্লাসের রেজাল্টও অত্যন্ত খারাপ করে ফেলে। শিমুলের বাবা জয়ন্ত কবীর চিন্তায় পড়ে যান। মেয়েকে জীবনের গতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য জয়ন্ত বাবু এক অন্য রাস্তা অবলম্বন করেন। তিনি শিমুলকে প্রায় জোর করে বাস্কেটবল একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই থেকে শিমুলের খেলার প্রতি মনোযোগ। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ইকোনমিকসে অনার্স নিয়ে যাদবপুরে ভর্তি হয়। সে বছরই একদিন অর্কর সঙ্গে ক্যানটিনে আলাপ হয়। সে আলাপই পরে ঘনীভূত হয়। অর্কর তখন ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফাইনাল ইয়ারের শেষ দু–এক মাস বাকি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে দিল্লিতে চলে যায় এমবিএ করতে। এমবিএ করার পর বেঙ্গালুরুর সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে চলে যায়। শিমুল এখন ইকোনমিকস নিয়ে মাস্টার্স করছে, ফার্স্ট ইয়ার। এরই মধ্যে অর্কর হঠাৎ এই বিয়ের প্রস্তাব। শিমুল মন থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে উঠতে পারেনি, তাই আজ খানিকটা অগোছালো মনেই অর্কর বাইকে চেপে বসে।


শিমুলকে দক্ষিণ কলকাতার এক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মলে নিয়ে আসে অর্ক। আগেই তার মা, কাকিমা আর বড় বউদি একটা ক্যাফেটেরিয়ায় অপেক্ষারত। শিমুল দুরু দুরু বুকে অর্ককে অনুসরণ করে। টেবিলের কাছে আসতেই শিমুল ঘামতে শুরু করে, গলা ক্রমশ শুকিয়ে ওঠে। শিমুলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর দিনও এমন হয়নি। অর্ক পাশ থেকে বলে ওঠে, ‘মা, এ-ই শিমুল।’

সে তো দেখতেই পাচ্ছি। অর্কর মা গম্ভীর স্বরে বলেন। তিনজোড়া চোখ শিমুলকে নিয়ে আপাদমস্তক সরেজমিন তদন্ত শুরু করে দেয়। শিমুল কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে অর্কর মাকে টেবিলের নিচে প্রণাম করতে যায়। অমনি অর্কর মা ‘থাক থাক’ করে ওঠেন। তবু শিমুল প্রণাম সেরে কাকিমার চেয়ারের দিকে এগোয়। কাকিমাকে প্রণাম করতে টেবিলের তলায় ঝুঁকতে যাবে, তখনই শিমুলের খোলা আঁচল পড়ে যায় কাকিমার সদ্য খাওয়া কফির কাপের ওপর। কাপের তলানিতে কিছুটা কফি ছিল, উল্টে কফিটা পড়ে শিমুলের হলুদ জামদানির আঁচলে। ব্যস, হয়ে গেল শিমুলের ধীরস্থিরতার পরীক্ষা। প্রণাম করে উঠে দাঁড়িয়েই দেখে হলুদ শাড়িতে কফির দাগ। ‘এ বাবা! কফির দাগ লেগে গেল, এবার কী হবে!’ বিচলিত শিমুলের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল কথাটা। ‘আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসব? শাড়িতে দাগটা লেগে যাবে...।’

‘আগেই তো তোমাকে থামতে বললাম, তা না তুমি...! যাও, পরিষ্কার করে এসো।’

শিমুল প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে যায়, অন্যমনস্কভাবে ভুলেই যায় টেবিলে ব্যাগ ফেলে এসেছে, ব্যাগে রুমাল আছে, রুমাল ভিজিয়ে দাগ তুলতে হবে। ওয়াশরুমে রুমালের কথা মনে পড়তেই আবার ছুটে যায় টেবিলের দিকে। একটা থাম পার হয়ে টেবিলে যাবে, তখনই অর্কর গলার আওয়াজ শুনতে পায়, ‘মা, এভাবে কেন বলছ? কালো তো কী হয়েছে?’ সঙ্গে সঙ্গে ছোট কাকিমা বলে ওঠেন, ‘তুই থাম অর্ক, মেজদি ঠিকই বলেছেন। এক্কেবারে কালো দাঁড়কাক। কাঠ কাঠ পুরুষালি চেহারা।’

‘তুই আর মেয়ে পেলি না অর্ক? আমি মা হয়ে অমন কালো মেয়েকে আমার ছেলের বউ বানাতে পারব না। আমাদের পরিবারে কোনো কালো মেয়ে বউ হয়ে আসেনি আজ পর্যন্ত। কালোরও রকমফের আছে। লম্বা পুরুষালি চেহারা, কাঠ কাঠ মতন। হাঁটাচলায় লক্ষ্মীভাব নেই। আসতে না আসতেই শাড়িতে কফিটা উল্টে দিল!’

‘মা, এটা তো হতেই পারে, বাইচান্স পড়ে গেছে কফি।’

‘দেখ অর্ক, মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি, তোকে আমরা সাফ জানিয়ে দিলাম। এরপরও তুই যদি জেদ করিস, তাহলে আমিও অন্ন–জল ত্যাগ করব।’
এতক্ষণ শিমুল কান পেতে শুনছিল এই কথোপকথন। তার চোখের জল বাঁধ মানে না। তবু দুহাত দিয়ে চোখ মুছে চোয়াল শক্ত করে থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসে অর্কর পাশে। বলে, ‘আরে আরে করেন কী আন্টি? এত তাড়াতাড়ি অন্ন–জল ছাড়ার কী হলো? বাংলা সিরিয়াল খুব দেখেন, বুঝতেই পারছি। তাই কথায় কথায় অন্ন–জল ছাড়ার হুমকি দেন বুঝি? আপনার ছেলে বড় ভালো ধরনের ছেলে, ওকে ভড়কাচ্ছেন কেন?’

‘এই শিমুল কী করছিস? চুপ কর!’

‘এত টেনশন কেন করছ অর্কদা? আন্টি আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করুন, আমি বিয়েতে রাজি আছি কি না? অর্কদা আমার মতামতের ধার ধারেনি, আমাকে নিয়ে চলে এসেছে। আমি এই বিয়েতে একদম রাজি নই। আমার মাস্টার্স করতে এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি। মাস্টার্স শেষ করে আমি পাইলট ট্রেনিংয়ের জন্য পরীক্ষায় বসব। আমার স্বপ্ন আমি পাইলট হব। মাথায় ঘোমটা দিয়ে গা–ভরা গয়না পরে আমি ঘরে বসে থাকার মেয়ে নই। সামনের মাসে বাস্কেটবলের স্টেট লেভেলে বাছাই হবে, এখন আমাকে প্র্যাকটিসে মন দিতে হবে। বিয়ের চক্করে পড়ে আমি আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারব না গো আন্টি। আজ উঠি আমি’—বলেই শিমুল উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য। পরক্ষণেই অর্কর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, ‘তোমাকে একা নিয়ে কখনো সংসার হতে পারে না, আমাকে ভুলে যেয়ো তুমি।’

মল থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে শিমুল নিজের প্রতি যেন নির্ভরতা খুঁজে পেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে উঠল, ‘আমার আকাশটা আরও বড়।’ তারপর ব্যাগ থেকে মুঠোফোন বের করে সায়ন্তনীকে ফোন করে বলল, ‘কাকিমাকে বলিস শাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে, কফির দাগটা আরও প্রিয়। ওই দাগ একদিন আমাকে আকাশে উড়তে শেখাবে। আমি রেখে দিলাম শাড়িটা আমার কাছে।’

সল্ট লেক সিটি, কলকাতা, ভারত
[email protected]