'দুই মাসের বানোত জায়গা-জমিন ভাঙে শ্যাষ'

দুই মাস আগেও যমুনা নদীর এই চরে মানুষের ঘনবসতি ছিল। বানের গ্রাসে বিলীনের পথে চরটি। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্ধুসভার সহযোগিতায় সেখানে বসতঘর হারা শতাধিক পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পরে তা নিয়ে আশ্রয়স্থলে ফিরছেন বানভাসি মানুষ। গতকাল দুপুরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটবাড়ি চরে।  ছবি: সোয়েল রানা
দুই মাস আগেও যমুনা নদীর এই চরে মানুষের ঘনবসতি ছিল। বানের গ্রাসে বিলীনের পথে চরটি। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্ধুসভার সহযোগিতায় সেখানে বসতঘর হারা শতাধিক পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পরে তা নিয়ে আশ্রয়স্থলে ফিরছেন বানভাসি মানুষ। গতকাল দুপুরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটবাড়ি চরে। ছবি: সোয়েল রানা

দুই মাস আগেও বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের হাটবাড়ি চরে প্রায় ৪০০ পরিবারের বসতি ছিল। ছিল খেত, গাছপালা। দুই মাসের বন্যায় চরের অর্ধেকের বেশি যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। বাসিন্দারা আশপাশের চর ও এলাকায় বাড়ি সরিয়ে নিয়ে গেছেন। পানি নামার পর চর বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার হাটবাড়ির চরে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বানভাসি ১০০টি পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। এই পরিবারগুলো করোনাকালের মধ্যে দুই মাসের বন্যা আর নদীভাঙনে বসতবাড়ি, ফসল, জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। হাটবাড়ি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আউচারপাড়া, দলিকা, উত্তর শিমুলতাইড়, সুজনেরপাড়া চরের এসব বাসিন্দারা গতকাল ত্রাণ নিতে জড়ো হয়েছিলেন হাটবাড়ির চরে। প্রথম আলো বগুড়া বন্ধুসভার সদস্যরা তাঁদের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেন। ত্রাণের প্রতিটি প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, সয়াবিন, লবণ ও পেঁয়াজ। এ সময় চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী, বগুড়ার প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাফিউর নূর, আবু সুফিয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হাটবাড়ির চরে ছোট একটা মুদি দোকান করতেন আবদুর রাজ্জাক। বন্যা আর নদীভাঙনে চরের অর্ধেক বিলীন হওয়ার পর ঠাঁই হয়েছে তাঁর সুজনেরপাড়া গুচ্ছগ্রামে। ত্রাণসহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার তিন মাস কাবু হইনি, বানের দুই মাসে সব শ্যাষ। একবেলা খায়্যা দিন যাচ্চে। ইলিপডা পায়্যা খুব উপকার হলো।’

হাটবাড়ি চরের মৎস্যজীবী রফিকুল ইসলামের ঘরের জায়গায় এখন যমুনা বয়ে যায়। নিজের ভিটার জায়গাটা দেখিয়ে বললেন, ‘এইহানে ঘর আচলো, এহন ভরা লদি। কী করমো, কোন্টে যামো, ভাবে পাইতাছি না। দুই মাস ধরে বানোত ভাসিচ্চি।’

যমুনা নদীর চরবেষ্টিত সারিয়াকান্দিতে করোনার সংক্রমণের মধ্যে প্রায় দুই মাস ধরে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা আর নদীভাঙনে বিপর্যস্ত চরের মানুষের জীবন। বিলীন হয়েছে ছয়টি গ্রাম।

চরের স্বামীহারা সাহেরা বেওয়া (৭৫) বলেন, ‘কয়ডা দিন আগতও এটি হামার বাড়ি আচলো। দুই মাসের বানোত জায়গা-জমিন ভাঙে শ্যাষ। লদী হামার সবই খাইল।’

টানা বন্যায় অচল হাটবাড়ি চরের মৎস্যজীবি আলম সরকারের (৬৫) সংসার আর চলছে না। দুই মাস ধরে পরিবার নিয়ে নৌকাতেই সংসার পেতেছিলেন। ভরা যমুনায় জাল ফেলতে পারেননি, এক দিন খেয়ে, আরেক দিন উপোস করে দিন গেছে তাঁর। ত্রাণ পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানালেন বারবার।

ছয় বছরের নাতি সুবেলের হাত ধরে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন জোবেদা বেওয়া (৭৫)। বলেন, ‘লাতিডার মুখত দুদিন থ্যাকে ভাত পড়েনি, ইলিপের চাল দিয়্যা লাতিডাক গরম ভাত রান্ধে খায়ামু।’