একক মালিকানার কোম্পানির ক্ষেত্রে জটিলতা

ই–কমার্স
প্রতীকী ছবি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চলতি সপ্তাহ থেকে ডিজিটাল বিজনেস পরিচিতি নম্বর বা আইডি (ডিবিআইডি) দেওয়া শুরু করেছে সরকার। কিন্তু এ জন্য নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে গিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন (প্রোপাইটরশিপ) প্রতিষ্ঠানকে। এ ছাড়া নিবন্ধনের বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তারা।

কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিবিআইডির নিবন্ধন ফরমে প্রতিষ্ঠানের ধরনের ঘরে একক মালিকানা অপশনটি থাকলেও পদবি ও নথি (ডকুমেন্টস) আপলোডের ঘরে প্রোপাইটর অপশনটি রাখা হয়নি। ফলে নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে গিয়ে কিছুটা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তবে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা এসপায়ার টু ইনোভেশান (এটু্আই) থেকে বলা হয়েছে, দ্রুতই এটি ঠিক করে দেওয়া হবে।

সচিবালয়ে গত রোববার ডিবিআইডি অ্যাপসের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে অনলাইনে ডিবিআইডি নিতে বলা হয়েছে। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে এটুআই প্রকল্প। এটুআইয়ের মাইগভ ডট বিডি ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধনের আবেদন করতে হচ্ছে।

ডিবিআইডির নিবন্ধন ফরমে প্রতিষ্ঠানের মালিকানার ধরনের ক্ষেত্রে একক, অংশীদারি ও যৌথ মূলধনি প্রতিষ্ঠানের অপশন রাখা হয়েছে। তারপর প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যান্য পরিচালকের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং মুঠোফোন নম্বরের তথ্য দিতে হবে। এ ছাড়া নিবন্ধন ফরমের শেষের দিকে নথি সংযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একক বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী প্রথম আলোকে জানান, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কাঠামোর ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো পদ নেই। তাই ফরম পূরণ করতে গিয়ে তাঁদের কিছুটা দোটানায় পড়তে হচ্ছে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিরাময় হোমিও ভবনের স্বত্বাধিকারী সাব্বির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব আগ্রহ নিয়ে নিবন্ধনের আবেদন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফরম পূরণ করতে গিয়ে প্রোপাইটার অপশন না পেয়ে আর এগোয়নি। কারণ, আমার প্রতিষ্ঠানে কোনো চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। তাই আপাতত আর আবেদন করিনি। পরে অন্যরা কী করছে, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’

গত রোববার উদ্বোধনী দিনে ডিবিআইডির সনদ পেয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নওরীনস মিরর। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী হোসনে আরা জানান, ফরমে প্রোপাইটরের কোনো অপশন ছিল না। তারপরও তিনি যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, তাই নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখিয়ে আবেদন করেছেন।

সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার। তিনি বলেন, সরকার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সুবিধার জন্যই এ নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করেছে। যেহেতু এটি নতুন প্রক্রিয়া, তাই শুরুতে কিছুটা অস্পষ্টতা ও ছোটখাটো সমস্যা থাকতে পারে। দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।

এদিকে এটুআইয়ের ইমপ্লিমেন্টেশন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যিনি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখাতে পারবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ফরমটি তৈরি করা হয়েছে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বললে ফরমে প্রোপাইটর অপশনটি যুক্ত করা হবে।

আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না অনেকে

গতকাল সোমবার দুপুরে ডিবিআইডি নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) এসেছিলেন রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা শের শাহ। অনলাইনে ড্রপ শিপিংয়ের ব্যবসা করেন তিনি। তবে আরজেএসসি কার্যালয়ে গিয়ে তিনি এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারেননি। শের শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কীভাবে নিবন্ধনের আবেদন করব, তা জানতে আরজেএসসিতে এসেছিলাম। কিন্তু এখান থেকে (আরজেএসসি কার্যালয়) একজন জানান, এ সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না। পরে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তার কাছে ফোন করে অনলাইনে আবেদনের বিষয়ে জানলাম।’