অর্থ মন্ত্রণালয়ের তালিকায় অভিযুক্তদের নাম

সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে পদোন্নতি দিতে সরকার যে তালিকা করেছে, তাতে অনিয়মের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই শীর্ষে রয়েছেন। পদোন্নতির জন্য ১১ জন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) তালিকা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ তালিকায় থাকা প্রথম দুজনই অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তালিকায় শীর্ষে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মিজানুর রহমান খান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জেলে ছিলেন। সেই কারণে তাঁকে বরখাস্তও করেছিল সরকার। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা আব্দুছ ছালাম আজাদ জনতা ব্যাংকের ডিএমডি ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্ত, যদিও মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে আজ সচিবালয়ে এ-সংক্রান্ত পদোন্নতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব উপস্থিত থাকবেন।

যোগাযোগ করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী তালিকায় সবার নাম আসবে। তালিকায় থাকা মানেই তো পদোন্নতি পাওয়া না। কমিটি বিবেচনা করবে কে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য। আজকের সভায় সে সিদ্ধান্তই হবে।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৈরি করা জ্যেষ্ঠতা তালিকার শীর্ষে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মিজানুর রহমান খানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় মন্তব্য করেছে, ‘বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন’। মুন গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় গত বছরের ৩০ জুন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই দিন দুপুরে মিজানুর রহমান খান ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পান। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তাঁকে আটক করে দুদক। মিথ্যা তথ্যে মুন গ্রুপকে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ায় মিজানুর রহমানসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই সময় মামলা করে দুদক। পরে ৭ আগস্ট মিজানুর রহমান খানকে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে মন্ত্রণালয় সম্প্রতি মিজানুর রহমানের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে মামলা চলমান থাকায় তাকে কোথাও পদায়ন করা হয়নি। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার তাঁর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে আমাদের ব্যাংকে ডিএমডি পদ খালি না থাকায় তিনি যোগদান করতে পারেননি।’ যদিও অগ্রণী ব্যাংক থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।

পদোন্নতির জন্য তৈরি তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আব্দুছ ছালাম আজাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় মন্তব্য করেছে, ‘বিভাগীয় মামলা চলমান’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের করা মামলায় আসামি ছিলেন আব্দুছ ছালাম। মামলায় গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হলে ছুটিতে বিদেশে চলে যান ছালাম। তাঁকে মামলার আসামি করা হলেও পরে চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়। মামলার পর ব্যাংকে তাঁর দায়িত্ব পরিবর্তন করে মানবসম্পদে বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে আবারও তাঁকে ঋণ বিভাগের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মুঈন উদ্দিন। তিনি মূলত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে চাকরিজীবন শুরু করেন। তালিকায় এরপরই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, তিনি মূলত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে চাকরি শুরু করেন। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন জনতা ব্যাংকের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এরপরই রয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের রফিকুল ইসলাম, মশিউর আলী, সোনালী ব্যাংকের আমিন উদ্দিন আহমেদ ও তরিকুল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি ব্যাংকের মাহতাব জামিন ও অগ্রণী ব্যাংকের আলী হোসেন প্রধানিয়া।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পদোন্নতি সভার নোটিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডির শূন্য পদে পদোন্নতির জন্য আজ বেলা তিনটায় সভা অনুষ্ঠিত হবে।