আধুনিক আবাস, সবুজের মিতালি

উঁচু দেয়ালের ওপাশে ব্যস্ত সড়ক। সারাক্ষণই ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। আর দেয়ালের এ পাশে ছিমছাম পরিবেশ। সড়কের পাশের ফুটপাত ঘেঁষে সারি সারি নানা প্রজাতির গাছ। সেই সবুজের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ‘ল্যান্ডমার্ক রেইনফরেস্ট’।

সোয়া আট কাঠা জমির ওপর গড়ে ওঠা আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের এই আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাটে বসে ঝুম বৃষ্টি দেখাটা বেশ জমবে। কারণ, ভবনের সামনে ইস্পাতের বিশেষ কাঠামোতে সুউচ্চ বাগান হবে। তাতে আটকে যাবে সড়কের যান্ত্রিকতা। চোখের সামনে তখন থাকবে কেবল সবুজ গাছ আর নীল আকাশ। ভোরের সূর্যটাও হয়তো দেখা যাবে খানিকটা। সব মিলিয়ে ল্যান্ডমার্ক রেইনফরেস্টে প্রতিদিনকার সকালটা রোমাঞ্চ নিয়েই অপেক্ষা করবে।

বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের কে ব্লকে সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউয়ে নির্মাণাধীন এই আবাসন প্রকল্পের নকশা করেছেন স্থপতি রফিক আজম। দশতলা বাড়িটি পূর্বমুখী হলেও দখিনা বাতাস ঘরের ভেতরে প্রবেশ করানোর জন্য ভবনের নকশায় রয়েছে ভিন্নতা। দিনের বেলা ফ্ল্যাটের কোনো অংশেই বৈদ্যুতিক বাতির প্রয়োজন হবে না। ভবনের পেছনে গেলেও চোখে পড়বে সবুজ। পেছনের বড় জমিতে এখনো অট্টালিকা ওঠেনি।

১১ আগস্ট আবাসন প্রকল্পটি ঘুরিয়ে দেখান আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের উপব্যবস্থাপক গাজী মো. তুনবির আলম। আমরা যখন ল্যান্ডমার্ক রেইনফরেস্টে প্রবেশ করি, তখন আকাশে ঘনকালো মেঘ। কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে নিচতলায় যেতেই একটুখানি খোলা জায়গা। সামনে এগোতেই হাতের বাঁয়ে বড়সড় জলাধার। তার মাঝে থাকবে একটি গাছ। আরেকটু এগোলেই অভ্যর্থনাকেন্দ্র। পাশেই অতিথিদের বসার সুব্যবস্থা। অভ্যর্থনাকেন্দ্রের পেছনে ভবনের বাসিন্দাদের জন্য থাকছে আধুনিক সরঞ্জামসজ্জিত ব্যায়ামাগার। সকালে–বিকেলে কিংবা রাতে ব্যায়াম করতে করতে চোখে পড়বে জলাধারের স্বচ্ছ পানি। ব্যায়ামাগারের পাশেই থাকছে পাঠাগার। সেখানে বসে একটু আয়েশ করে বই পড়ার সুযোগ পাবেন বাসিন্দারা।

ভবনের পেছন দিকে রয়েছে একটি কাঠগোলাপগাছ। সেই জায়গায়টা সুন্দর করে সাজিয়েছে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক। ভবনে লিফটের সংখ্যা দুটি। তবে নির্মাণাধীন হওয়ায় লিফট এখনো লাগেনি। সিঁড়ি বেড়ে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে গেলাম আমরা। ততক্ষণে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মাঝ বরাবর লম্বা জায়গাজুড়ে থাকবে ড্রয়িং, ডাইনিং ও ফ্যামিলি লিভিংয়ের ব্যবস্থা। পূর্ব দিকে বড় বারান্দা। সেই বারান্দার সামনে থাকবে মাঝারি আকারের বাগান। তার সামনে ইস্পাতের বিশেষ কাঠামোর সুউচ্চ ঝুলন্ত বাগান তো থাকছেই। পশ্চিম পাশেও রয়েছে আরেকটি বাগান। ফলে ফ্ল্যাটের বসবাসে একঘেয়েমি ভাব আসার সুযোগ কম।

দখিনা বাতাস ঘরের ভেতরে প্রবেশের জন্য ভবনের নকশাটা বিশেষভাবে করা হয়েছে। মূলত পূর্ব দিকের দেয়ালে ধাক্কা লেগে বাতাস ঘরে আসবে। সেটি আবার বের করে দেওয়ার জন্য শয়নকক্ষে রয়েছে ফাঁকা জায়গা। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত খোলা থাকবে। সেখানে থাকবে ইস্পাতের ফ্রেম আর বিশেষ গ্লাস। তাতে বাইরের শব্দ ঘরের ভেতরে আসবে না।

ল্যান্ডমার্ক রেইনফরেস্ট প্রকল্পের ৫০ শতাংশ জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভবনটি করা হয়েছে। প্রতি তলায় থাকছে মাত্র একটি ফ্ল্যাট। ৩ হাজার ২৫৮ ও ৩ হাজার ৪৬২ বর্গফুটের ফ্ল্যাটে থাকছে চারটি শয়নকক্ষ ও চারটি বাথরুম। তা ছাড়া রান্নাঘরের পাশেই থাকছে গৃহকর্মীর থাকার জায়গা ও বাথরুম। ভবনে ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে গাড়ি রাখা যাবে ১৬টি।

তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট দেখে নিচে নামলাম আমরা। পুরোদমে নির্মাণকাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ভবনের সামনের একটা আমগাছে চোখ পড়ল। গাছটি থাকবে? আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের কর্মকর্তা বললেন, অবশ্যই থাকবে। কথাটা শুনে বেশ প্রশান্তি লাগল। এতটুকু হলেও প্রকৃতির মধ্যে বসবাস কার না পছন্দ!

বারিধারার এই প্রকল্পের মতোই নর্থ বনানীতে ল্যান্ডমার্ক উইস্টলিং উডস নামের আরেকটি আবাসন প্রকল্প করছে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক। ১১ দশমিক ৭২ কাঠার ওপর গড়ে ওঠা প্রকল্পটি দক্ষিণদুয়ারী। প্রকল্পের জমির ৫৫ শতাংশই ফাঁকা। ফলে বেশ খোলামেলা পরিবেশ। বাড়ির সামনে তিনটি বড় গাছ থাকছে। ওপরের কয়েকটি তলায় মাঝারি আকারের গাছ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে পুরো কাজ শেষ হলে ভবনের সঙ্গে প্রকৃতির বেশ একটা সখ্য গড়ে উঠবে। তাতে প্রতিদিনই সতেজ মনে হবে পুরো বাড়ি।

আবাসন প্রকল্পটিতে ১৮টি ফ্ল্যাট থাকছে। সেগুলোর আয়তন ২ হাজার ৪১৮ থেকে ২ হাজার ৫৫০ বর্গফুট। দ্বিতীয় তলায় ভবনের বাসিন্দাদের জন্য কমিউনিটি হল থাকবে। ১২ তলায় থাকবে ব্যায়ামাগার। পাশেই থাকবে লম্বা জায়গাজুড়ে বাগান। ছাদের ওপর থাকছে বাসিন্দাদের জন্য সুইমিংপুল।

দুইতলা সমান উচ্চতার নিচতলা দিয়ে ভবনটিতে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে প্রথমেই দমবন্ধ পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে না। বাচ্চাদের খেলার জন্য ছোট্ট সবুজ একটা মাঠ থাকছে। পাশেই জলাধার। আবার ভবনের পেছনের খালি জায়গায় রয়েছে বেশ কিছু গাছ।

দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের হাতে গড়া আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে প্রথম প্রকল্প করলেও পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের পদচারণ ছড়িয়ে পড়ে। আবাসনের পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রকল্পও রয়েছে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের। বর্তমানে ১০ বিঘা জমির ওপর শ্যামলীতে কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নির্মাণে হাত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।