উদ্যোক্তা তৈরিতেও এগিয়ে
বিভিন্ন খাতের পরিষেবাকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে সেবা এক্সওয়াইজেড নামের একটি অনলাইন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। মাত্র ১১ লাখ টাকা পুঁজি আর ৫০ জন কর্মী নিয়ে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে তারা। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের ব্যবধানে এখন তা প্রায় ৪০০ লোকের প্রতিষ্ঠান। এ সময়ে ১০ লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়েছে সেবা এক্সওয়াইজেড। আর সফল এ উদ্যোগের পেছনে পরামর্শ ও পুঁজি বিনিয়োগ করে সহায়তা দিয়েছে দেশের টেলিকম খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন।
গ্রামীণফোনের সহায়তায় তৈরি আরেকটি সফল স্টার্টআপ হলো স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান সিএমইডি হেলথ। ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি, স্বাস্থ্যসেবার খরচ ও সময় কমানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে তারা।
শুধু সেবা এক্সওয়াইজেড কিংবা সিএমইডি নয়, দেশে এ রকম আরও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তৈরিতে পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে গ্রামীণফোন। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালে জিপি অ্যাকসিলারেটর নামে একটি কর্মসূচি বা প্রোগ্রাম শুরু করে কোম্পানিটি। দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে এর আগে পৃথক কিছু উদ্যোগ নিলেও বর্তমানে জিপি অ্যাকসিলারেটরের মাধ্যমেই কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীণফোন।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪টি স্টার্টআপ তৈরি হয়েছে দেশে। পার্কিং কই, ডক্টর কই, বাড়ি কই, ঢাকা কাস্ট ও অল্টার ইয়ুথসহ কয়েকটি স্টার্টআপ ইতিমধ্যে সফল উদ্যোগ হিসেবে আলোচনায় এসেছে। এদের মধ্যে সেবা এক্সওয়াইজেড, সিএমইডি ও পার্কিং কইয়ের কোম্পানি ভ্যালুয়েশন ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
সেবা এক্সওয়াইজেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক বলেন, তারা প্রায় ২০ হাজার পরিষেবা কর্মীর মাধ্যমে গ্রাহকদের ৮৬টির বেশি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে তাদের মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণফোন থেকে বিনিয়োগ পাওয়ায় আমাদের উদ্যোগটি দ্রুতই সফলতার মুখ দেখে। পুঁজিসহায়তা ছাড়া সরাসরি পরামর্শ দিয়েও পাশে থাকছেন তাঁরা।’
জিপি অ্যাকসিলারেটর প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম–সংশ্লিষ্ট অংশীদারদেরও যুক্ত করেছে গ্রামীণফোন। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে তাদের কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে পারছে। গ্রামীণফোন জানিয়েছে, তারা উদ্যোক্তাদের নিয়ে কোহর্ট গঠন করে এসব পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। স্টার্টআপগুলোর অংশগ্রহণে ইতিমধ্যে সফলভাবে ছয়টি কোহর্ট পর্ব শেষ করেছে তারা। এসব কোহর্ট থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক হাজারের বেশি উদ্যোক্তা উপকৃত হয়েছেন।
দেশের মেধাবী উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করতে ও তাঁদের উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করে তুলতে আরও কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে গ্রামীণফোন।
গ্রামীণফোনের ইয়ুথ প্রোগ্রামের প্রধান ফারহানা ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থসহায়তা ও ১০ কোটি টাকার বেশি অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে গ্রামীণফোন। আর তাদের এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশজুড়ে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি স্টার্টআপ খাতে নারীর ক্ষমতায়ন ও বৈষম্য দূর করা নিয়েও কাজ করছেন বলে জানান ফারহানা।
করোনা মহামারি শুরু হলে নতুন উদ্যমে উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ায় জিপি অ্যাকসিলারেটর। ফারহানা ইসলাম আরও বলেন, করোনার মধ্যে সারা দেশের উদ্যোক্তাদের অনলাইনে সংযুক্ত করেন তাঁরা। এরপর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সেশন আয়োজন করে জিপি অ্যাকসিলারেটর। স্টার্টআপ খাতে এসব অবদানের স্বীকৃতিও মিলেছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে। ২০২১ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে জাতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার পেয়েছে জিপি অ্যাকসিলারেটর প্রোগ্রাম।
স্টার্টআপ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে গত বছরের জুনে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে জিপি অ্যাকসিলারেটর। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেতে সহায়তা করবে তারা।