উন্নত জীবনযাপনে ভালো আবাসন দিতে চাই

র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ লিমিটেড দেশের প্রথম সারির আবাসন কোম্পানি। সম্প্রতি আবাসন খাতের বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশিদ রহমান।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ কী ধরনের ফ্ল্যাট বানায়? গ্রাহক কারা?

মাশিদ রহমান: র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ সব সময় একটু অভিজাত ঘরানার ফ্ল্যাট বানায়। কিন্তু সব সময় খেয়াল রাখা হয় যেন ফ্ল্যাটের মূল্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী হয়। ভবন নির্মাণের জন্য র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজের ১৯ জন স্থপতির একটি দল আছে। এই স্থপতি দলের কেউ ভবনের বাইরের অংশ নিয়ে কাজ করেন, কেউ প্রকল্পটি কীভাবে আরও বেশি সবুজ করা যায়, তাতে মনোযোগ দেন। আর ভবনের ভেতরের অংশ নিয়ে কাজ করে স্থপতিদের আরেকটি অংশ। এভাবেই শেষ পর্যন্ত ভেতর-বাইরের মিলিয়ে র‌্যাংগ্‌সের একটি প্রকল্প হয়ে ওঠে অনন্য।

র‌্যাংগ্‌সের প্রকল্পগুলোতে দুটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তার একটি হলো জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার। অপরটি হলো ভবনের বাহ্যিক নন্দনশৈলী। ক্রেতারা বাড়তি টাকা খরচ না করেও ভালো কিছু চান—এমন রুচিমান ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা এখন গ্রাহকের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ভবন বানাচ্ছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বর্তমানে অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান কতটা?

মাশিদ রহমান: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আবাসন খাতের অবদান ৭ থেকে ৮ শতাংশ। তৈরি পোশাকের মতো আবাসন খাতেও কর্মসংস্থান বেশি হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আবাসন খাতে ৫০ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত আছে। সব মিলিয়ে ২৪০টি ছোট-বড় খাত আবাসনের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে বড় খাতগুলো হলো রড, স্টিল, সিমেন্ট, ইট, রং, গ্লাস, সিরামিকস, টাইলস, ইলেকট্রিক পণ্য। লক্ষ করে দেখুন, সব খাতেই বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর মানে দেশজ পণ্যের ওপরেই পুরো নির্মাণ খাত দাঁড়িয়ে আছে। ইদানীং নির্মাণসামগ্রী বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু আবাসন খাতটি অনেকটা দুয়োরানির সন্তানের মতো। অন্ন-বস্ত্র খাতকে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হলেও আবাসন খাত যথাযোগ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনার সময়ে আবাসন খাতের ব্যবসা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

মাশিদ রহমান: করোনার মধ্যে আবাসন খাতের বড় কোম্পানিগুলো টিকে গেছে। নামসর্বস্ব ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান হারিয়ে গেছে। অনেক কোম্পানি খেলাপি হয়ে গেছে। তাদের এত পুঁজি নেই যে তারা লোকসান দিয়ে টিকে থাকতে পারবে। করোনার প্রথম দিকে আবাসন খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ধরনের ক্ষতি হয়েছে, এখন তা তারা অনেকটাই পুষিয়ে নিচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তবে ছোট আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এতে নতুন সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। নির্মাণকাজের মান কমছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ফ্ল্যাটের দাম সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালে আসছে না কেন? এ ক্ষেত্রে সরকারের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

মাশিদ রহমান: এ জন্য সরকারের একটি নীতিমালা প্রয়োজন। যেমন কেউ যদি প্রথমবার ফ্ল্যাট কেনেন, তাহলে সুদবিহীন পাঁচ বছরের কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া উচিত। কিংবা গৃহঋণের সুদের হার প্রথম ১০ বছরের জন্য ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করতে পারে। এ ছাড়া নতুন নতুন বর্ধনশীল এলাকা যেমন পূর্বাচল, জলসিঁড়ি, উত্তরা, এক্সটেনশনসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প করার জন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। ওই সব এলাকায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল করার জন্য সরকার কর অবকাশসুবিধা দিতে পারে। ভালো স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল হলে এমনিতেই মানুষ সেখানে যেতে আগ্রহী হবেন। আবাসিক এলাকা বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে ফ্ল্যাটের দামও মধ্যবিত্তের নাগালে চলে আসবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নানা মহলে আলোচনা হয়, ফ্ল্যাট কেনার নামে আবাসন খাতে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা ঢুকছে। আপনি কী মনে করেন?

মাশিদ রহমান: ফ্ল্যাট বেচাকেনা হয় ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের ভিত্তিতে। সরকার আইনগতভাবে অপ্রদর্শিত আয় দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ দিয়েছে। এর ফলে দেশের টাকা দেশেই থেকে যাচ্ছে। তা না হলে এই টাকা বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মূলমন্ত্র কী?

মাশিদ রহমান: র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ ক্রেতার কাছে যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তা-ই দেয়—এটাই মূলমন্ত্র। এটি আমাদের ভালোবাসার ব্যবসা। আমরা উন্নত জীবনযাপনে ভালো আবাসন দিতে চাই।