ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের সবচেয়ে বড় উৎস ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। এ জন্য এই দুই বিভাগে ব্যাংকগুলোর আছে বিশেষ নজর। ব্যাংকগুলোর মতো এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্টরাও এখন এই দুই বিভাগমুখী। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হলেও তা শহরের গণ্ডির মধ্যে আটকে পড়েছে। এখন রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ দেখা যাচ্ছে, যদিও শহরের চেয়ে গ্রামে এজেন্ট বুথের সংখ্যা ৬ গুণ বেশি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেশি। সে জন্য এদিকে নজর থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আর যারা এজেন্ট হয়, তাদের এই ব্যবসায় আগ্রহ থাকতে হয়। ব্যাংকগুলো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এই দুই বিভাগের এজেন্টরা বেশি আগ্রহী, এ জন্য এজেন্ট বুথও বেশি।

জানা যায়, গত ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট আউটলেট ছিল ১৯ হাজার ২৪৭টি। এর মধ্যে শহরের এজেন্ট ছিল ২ হাজার ৭৩০টি আর গ্রামের এজেন্ট ছিল ১৬ হাজার ৫১৭টি। তবে এজেন্ট আউটলেটের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই আউটলেট ৪ হাজার ৭৫৭টি। এরপরই চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ হাজার ৮১টি। খুলনা বিভাগে আউটলেট ২ হাজার ৩৯৬টি, রাজশাহী বিভাগে ২ হাজার ৩৭২টি ও রংপুর বিভাগে ২ হাজার ১৯টি। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে আউটলেট ১ হাজার ২৭৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ১৬৫টি ও সিলেট বিভাগে ১ হাজার ১৮১টি।

গত ডিসেম্বর শেষে দেশে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৫১ ও আউটলেট ১৯ হাজার ২৪৭।

এ নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে ব্যাংকসেবা বঞ্চিত ব্যক্তিদের সেবার আওতায় আনার জন্য। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সহজেই সেবা ও তদারক করা সহজ, এ জন্য অনেক ব্যাংকই এই দুই বিভাগে বেশি ঝুঁকেছে। অনেক ব্যাংক সেবাটি নামমাত্র চালু করেছে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এসব এলাকা সেবার আওতায় আসার পর অন্য এলাকায়ও ব্যাংকগুলো ছুটবে।

এদিকে কম খরচে আমানত মিলছে, এ জন্য ব্যাংকগুলো এই সেবার দিকে ঝুঁকছে। এখন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংক এই সেবা চালু করেছে। মোট হিসাব দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। তবে ঋণ দিয়েছে মাত্র ৫৫২ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত ঋণ আকারে চলে যাচ্ছে বড় গ্রুপগুলোর হাতে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতের অর্থ এজেন্টদের মাধ্যমেই ঋণ বিতরণের বাধ্যবাধকতা আরোপের সময় এসেছে। এতে ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন। দেশের উন্নয়ন আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কে মুজেরি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত উন্নয়ন তখনই হবে, যখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহজে ঋণসুবিধা পৌঁছে দেওয়া যাবে। এজেন্টদের শুধু আমানত সংগ্রহের কাজে ব্যবহার না করে তাদের মাধ্যমে ঋণ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই উদ্যোগ নিতে হবে।