এবার যুক্তরাজ্যে মন্দার আশঙ্কা

যুক্তরাজ্য, ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। এতে দেশের রপ্তানি আয় হ্রাসের শঙ্কা থাকে।

ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালের প্রথম দুই প্রান্তিকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল। সেখান থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় আবারও মন্দার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, কিন্তু প্রথম প্রান্তিকের শেষ অর্থাৎ মার্চ মাসে সে দেশের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সে দেশের মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভ্রমণও কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা একদম প্রয়োজনীয় নয়, এমন সব ব্যয়ও কমিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা আবার মন্দার আশঙ্কা করছে। সংজ্ঞা অনুসারে, পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বলা হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে কোভিড বিধিনিষেধ উঠে যায়। তখন দেশটির পর্যটন ও যোগাযোগ খাত ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে পরিস্থিতি বদলে যায়। বলা যায়, এই যুদ্ধ যুক্তরাজ্যের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেয়।

যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ পল ডেইলস বিবিসিকে বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায়, মূল্যস্ফীতির সংকট শুরু হওয়ার আগে অর্থনীতিতে যে গতি এসেছে বলে ভাবা হয়েছিল, সেই গতি আদতে আসেনি।’ তিনি মনে করেন, নতুন আরেক মন্দার পর্ব শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গ মন্দার কবলে পড়তে পারে।

এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সম্প্রতি বলেছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশে উঠতে পারে। এর যৌক্তিক পরিণতি হিসেবে তারা বলেছে, অর্থনীতির গতি অনেকটাই কমে যেতে পারে। মূলত খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যস্ফীতির কারণে এটা ঘটবে।

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এখন নীতি সুদহার বৃদ্ধির পথে হাঁটছে। মূলত নীতি সুদ হার বৃদ্ধি করে অর্থের প্রবাহে লাগাম টানার চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে মানুষের হাতে অর্থের জোগান হ্রাস পায় এবং বাজারে চাহিদা কমে। একপর্যায়ে মূল্যস্ফীতিও কমে আসে। কিন্তু এতে আবার প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

যুক্তরাজ্য, ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। আগেও তা দেখা গেছে। দেশের রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সেই তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সেখানকার মানুষ ব্যয় হ্রাস করতে গিয়ে পোশাক কেনা কমিয়ে দিলে আমাদের রপ্তানিও নিশ্চিতভাবে মার খাবে।

শঙ্কার কথা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ সব বৈশ্বিক সংস্থাই বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই যুগ দীর্ঘ হবে। অন্তত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দিন চলে, তত দিন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেই সঙ্গে আছে চীনের বিভিন্ন শহরের লকডাউন। এই বাস্তবতায় দেশের রপ্তানি খাতের বিকল্প চিন্তা করা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

অন্যদিকে দেশের আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে। চাপ পড়ছে ডলারের রিজার্ভে। এ বছর প্রবাসী আয় অনেকটাই কমেছে। এই বাস্তবতায় রপ্তানি কমলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।