এ যুগের নতুন জ্বালানি তেল হচ্ছে তথ্য

অনেকেই এই ভেবে শঙ্কিত যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবোটিকস একসময় মানুষের সব কাজ খেয়ে নেবে। কিন্তু মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখেন। ১৮ নভেম্বর বিশ্বখ্যাত এমআইটির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎটা একটু ভিন্ন ধরনের হবে। বলা যায়, তিনি নতুন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যে ভবিষ্যতে মানুষের উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যাবে। আর মানুষের উৎপাদনশীলতা যখন বাড়বে, তখন তার মজুরিও বাড়বে।

সত্য নাদেলা মনে করেন, ‘কম্পিউটিং এখন বাস্তব জীবনে নেমে এসেছে। কম্পিউটার এখন কোথায় নেই। আমরা সবাই এখন ডিজিটাল ব্যবস্থায় বসবাস করছি।’ আর এই পরিস্থিতিতে মজুরি বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে আরও অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। স্মল এআই বা ছোট ছোট ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের সম্ভাবনা দেখেন তিনি।

প্রযুক্তি যেমন মানুষের কাজ কেড়ে নিতে পারে, তেমনি আবার নতুন কাজও সৃষ্টি করতে পারে। কাজের ভবিষ্যৎ শীর্ষক এমআইটির এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে যত কাজ পৃথিবীতে আছে, ১৯৪০ সালে তার ৬৩ শতাংশের অস্তিত্ব ছিল না। বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে কম্পিউটার–সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ। বাংলাদেশে যখন কম্পিউটার আসে, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, মানুষের আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু দেখা গেল, অনেক কাজ কম্পিউটার করে দিলেও যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও নতুন কাজের সৃষ্টি হলো। ফলে নতুন প্রযুক্তি আরও নতুন কাজ সৃষ্টি করবে, সেটা আশা করাই যায়।

সত্য নাদেলা
পারে সত্য নাদেলা বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি বলছেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন জগৎকে অন্য স্তরে নিয়ে যাবে। অগমেন্টেড রিয়েলিটি থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আসবে, যা একসময় হয়তো শুধু কল্পনার জগতেই ছিল। এতে মানুষের যেমন অনেক সমস্যার সমাধান হবে, তেমনি কারখানার সম্মুখসারির কর্মীদের উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যাবে।
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা

অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যাপারে সত্য নাদেলা বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি বলছেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন জগৎকে অন্য স্তরে নিয়ে যাবে। অগমেন্টেড রিয়েলিটি থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আসবে, যা একসময় হয়তো শুধু কল্পনার জগতেই ছিল। এতে মানুষের যেমন অনেক সমস্যার সমাধান হবে, তেমনি কারখানার সম্মুখসারির কর্মীদের উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা হয়তো দূর থেকে কাজ করবেন, কিন্তু সম্মুখসারির কর্মীদের কাছে জ্ঞান স্থানান্তর সহজ হবে। তাতে মজুরি বাড়বে বৈ কমবে না।

যন্ত্র শিগগিরই মানুষের সব কাজ শিখে নেবে, সেটা বিশ্বাস করেন না সত্য নাদেলা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনে শিগগিরই বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে, তা বিশ্বাস করেন তিনি। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহার। মানুষই এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে, মানুষই তা ব্যবহার করবে, ফলে এটি কীভাবে আরও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করা যায়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও মানুষের হাতে।

তবে সবাই যে প্রযুক্তির ব্যবহারে একইভাবে লাভবান হচ্ছেন, তা নয়। ওপরের সারির কর্মীরা যতটা লাভবান হচ্ছেন, নিচের সারির কর্মীরা ততটা নয়। ফলে বেতনবৈষম্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই বৈষম্য দূর করতে সত্য নাদেলা দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে, সবাই যেন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে, সে জন্য ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সবার হাতে যেন ডিজিটাল যন্ত্র পৌঁছায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিচের সারির কর্মীদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সে জন্য তাদের প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত করে তোলার বিকল্প নেই। এর আগে তিনি যে জ্ঞান স্থানান্তরের কথা বলেছেন, এর মাধ্যমে সেটি সম্ভব।

এমআইটির ওই প্রতিবেদনে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য যে ট্যাক্স ক্রেডিটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, নাদেলা তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো যেন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে পারে, সে জন্য সরকার প্রণোদনা দিতেই পারে। তবে সবার আগে কর্মীর স্বাস্থ্য, কর্মী যদি ভালো থাকেন, তাহলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এদিকে ঘর থেকে কাজের সংস্কৃতি যেমন পাকাপোক্ত হচ্ছে, তেমনি ঘরে থেকে কাজ করারও যে একধরনের ক্লান্তি আছে, সেটাও বাস্তব। নানা ক্ষেত্রে সেটা দেখা যাচ্ছে। কর্মীর স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ এখানেই চলে আসে।

নাদেলা বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে, তথ্য হচ্ছে এই যুগের নতুন তেল। তথ্য আছে ও থাকবে, কীভাবে আমরা তথ্য ব্যবহার করব, তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করবে। আর কম্পিউটারের আরও অনেক শক্তি আমরা দেখব, তাতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে, কিন্তু কথা হচ্ছে, সর্বত্র বিরাজমান এই কম্পিউটার আমরা কীভাবে ব্যবহার করব, তাই সমাজের গতি ঠিক করে দেবে। আর আমাদের সমাজের চাহিদা কী, যুগের চাহিদা কী।’
সত্য নাদেলা আরও বলেন, ‘এই যুগের আহ্বান হচ্ছে, পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন না করে উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সে পথেই হাঁটতে হবে।’