নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার মুদ্রাক্ষরিক মো. হেদায়েত উল্লাহ। কারণ, সংসার খরচ চালিয়ে ছেলের কোচিংয়ের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁর জন্য। এমনিতে কম্পিউটারের এ যুগে মুদ্রাক্ষরিক পেশায় দুর্দিন চলছে। তাতে আয় কমে গেছে হেদায়েত উল্লাহর। এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাড়িয়ে দিয়েছে সংসার খরচ।
এ অবস্থায় আগামী মাস থেকে ছেলেকে কোচিংয়ে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন সীমিত আয়ের এ মানুষটি। আগামী বছর হেদায়েত উল্লাহর ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ফার্মগেটে কথা হয় হেদায়েত উল্লাহর সঙ্গে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ফার্মগেটে ৩১ বছর ধরে মুদ্রাক্ষরিকের কাজ করছেন। ১৯৮১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে যুক্ত হন এ পেশায়।
হেদায়েত উল্লাহ জানান, আগে সকাল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত চাকরির আবেদন, স্ট্যাম্প বিক্রি, নোটারি করাসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে তাঁর আয় কমতে থাকে।
ফার্মগেটে একটি কম্পিউটারের দোকানের সামনে দৈনিক ২০০ টাকা ভাড়ায় টাইপ মেশিন নিয়ে বসেন হেদায়েত উল্লাহ। স্ট্যাম্প বিক্রি ও নোটারি করাসহ সপ্তাহে দুই-তিনটি টাইপিংয়ের কাজ পান তিনি। এখন তাঁর আয়ের মূল উৎস স্টেশনারি পণ্য বিক্রি। তিনি বলেন, করোনার আগে গড়ে এক হাজার টাকা আয় হতো। খাওয়া-দাওয়া, ভাড়া মিটিয়েও ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা নিজের থাকত। করোনার শুরুতে এ আয় কমে ৪০০-৫০০ টাকায় নেমে আসে। এখন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৩ সপ্তাহ ধরে দৈনিক আয় কমে নেমেছে ২৫০ টাকার নিচে। তাতে দিন শেষে হাতে তেমন টাকা থাকছে না তাঁর।
হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষিত হয়েও অনেক শ্রমজীবী মানুষের চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমার। কারণ, একজন রিকশাওয়ালা একটু বাড়তি পরিশ্রম করলে দৈনিক হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারেন। আর আমি সারা দিনে ৩০০ টাকাও আয় করতে পারছি না।’ খরচ বাঁচাতে বিজয় সরণি এলাকায় দুই হাজার টাকা ভাড়ায় টিনশেড একটি মেসে থাকেন তিনি। বর্ষায় সেখানে পানি ওঠে। খরচের টানাটানিতে বাসায় রান্নার জন্য আলাদা কোনো লোক রাখতে পারেননি। তাই সকালে আর রাতে প্রায়ই রুটি-কলা খেয়ে কাটান। আর ৫০-৬০ টাকার মধ্যে হোটেলে দুপুরের খাবার সারেন। চলতি মাসে এখনো বাসাভাড়া দিতে পারেননি।
চলতি মাসে নতুন করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে হেদায়েত উল্লাহর। কীভাবে চলছেন এখন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে। তাদের বলে দিয়েছি, কম খরচ করতে। তা সত্ত্বেও বড় চিন্তা ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো নিয়ে। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। প্রতি মাসে কোচিংয়ের জন্য তাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বেতন আর ১০০ টাকার হাতখরচ দিতে হয়। ছেলেকে এত খরচ দেওয়া এখন আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই গত সপ্তাহে ছেলেকে বলে দিয়েছি, আগামী মাস থেকে আর কোচিংয়ে না যেতে। দৈনিক যে হাতখরচ দিতাম, সেটিও বন্ধ করে দিয়েছি।’