২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর প্রায় ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এ পর্যন্ত জরিমানাসহ প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অর্থবছর শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার কার্যক্রম মূল্যায়নে এই চিত্র উঠে এসেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
গত অর্থবছরে ২৩৩টি ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরুর বছরে করোনার বিস্তার ঘটায় বড় ধরনের অভিযানে নামেনি ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা। পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা সচল হলে এনবিআরের নির্দেশে ভ্যাট ফাঁকি রোধে মাঠপর্যায়ের রাজস্ব আহরণকারী দপ্তরের পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে ভ্যাট গোয়েন্দা।
গোয়েন্দারা দুইভাবে তদন্ত করেন। প্রথমত, তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিক অডিট কর্মসূচি তৈরি করে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও অডিটের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত, ভ্যাট আইনের ৮৩ ধারা অনুসারে তল্লাশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে। গত বছরের হিসাব অনুসারে ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের অডিট করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান অডিটে উদ্ঘাটিত ভ্যাট ফাঁকির টাকা পরিশোধ করেছে। এতে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফাঁকির ভ্যাট জমা দিয়েছে, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (৪৬২ কোটি ২৮ লাখ), প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড (১৪৫ কোটি ১৬ লাখ), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (১২৫ কোটি ৭৩ লাখ), বেসিক ব্যাংক লিমিটেড (১০০ কোটি ৫১ লাখ), জনতা ব্যাংক লিমিটেড (৪৯ কোটি ৫২ লাখ), মেটলাইফ বা সাবেক অ্যালিকো (৪৮ কোটি ৮৪ লাখ), সোনালী ব্যাংক লিমিটেডসহ (৪৪ কোটি ২৭ লাখ) আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
৮৩ ধারায় অভিযান করা হয়েছে আরও ৯২টি প্রতিষ্ঠানে। এ ক্ষেত্রেও অনেক প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিত হয়ে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ৮ দশমিক ৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
গত অর্থবছর অধিদপ্তর বিভিন্ন মার্কেটে খুচরা পর্যায়ে বিশেষ জরিপ পরিচালনা করে। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ নির্দেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সর্বমোট ২৫টি মার্কেটে অবস্থিত ১৫ হাজার ৪৮২টি দোকানে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেখা যায়, নতুন আইন অনুযায়ী ১৩ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধনধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।
এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপ পরিচালনার পর মাঠপর্যায়ে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণের হার মাসে প্রায় চার গুণ বেড়েছে।
এনবিআর সূত্র জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছর ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে প্রায় ৫ গুণ বেশি এবং তাৎক্ষণিক আদায় বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন হয়েছিল ৩১৯ কোটি টাকা এবং আদায় হয়েছিল প্রায় ৫৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরেও ভ্যাট গোয়েন্দার এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান। পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকির আরও নিত্যনতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবন এবং তা রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তিনি।