চারকোলের রপ্তানি বাড়াতে নীতিমালা করল সরকার
পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত চারকোলের রপ্তানি বাড়াতে চারকোল নীতিমালা করেছে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়। এতে চারকোলশিল্পের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি, রপ্তানিতে সরকারি প্রণোদনা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, চারকোলশিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব, টেকসই, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও রপ্তানিমুখী চারকোলশিল্প প্রতিষ্ঠায় ‘চারকোল নীতিমালা- ২০২২’ প্রণয়ন করেছে সরকার। গত ১৮ মে এ নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। পরে ২৬ মে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়।
পাটকাঠি বা পাটখড়িকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুড়িয়ে এরপর শীতলীকরণ ও সংকোচন করে চারকোল তৈরি করা হয়। এই চারকোলে প্রায় ৭৫ শতাংশ কার্বন থাকে। পানি বিশুদ্ধকরণ, আতশবাজি, জীবনরক্ষাকারী বিষনিরোধক ট্যাবলেট, প্রসাধনসামগ্রী, ফটোকপিয়ার ও কম্পিউটারের কালি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে চারকোল ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরাসহ কয়েকটি জেলার প্রায় ৪০টি কারখানায় চারকোল উৎপাদিত হচ্ছে। এসব কারখানা থেকে বছরে প্রায় ৭ হাজার ৭১ মেট্রিক টন চারকোল বিদেশে রপ্তানি হয়, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, পাটখড়ি থেকে অত্যন্ত কম মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ হয় বলে চারকোলশিল্পকে পরিবেশবান্ধব মনে করা হয়। তাই পাটখড়িসহ অন্য যেকোনো উপকরণ থেকে চারকোল উৎপাদন ও এ খাতের শিল্পসমূহকে বিকশিত করার লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে নীতিমালাটি করা হয়েছে। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের চারকোল উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি বিষয়ে সহায়তা প্রদান, দক্ষ জনবল তৈরি, উৎপাদিত চারকোলের মান নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতা প্রদান, দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে সুযোগ সম্প্রসারণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসুবিধা প্রদান এবং চারকোল রপ্তানিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা প্রদানও এ নীতিমালার উদ্দেশ্য।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা, নতুন এ নীতিমালা তৈরির ফলে চারকোলশিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসুবিধা ও সরকারি প্রণোদনার সুযোগ বাড়বে। এর ফলে চারকোলের উৎপাদন, রপ্তানি ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। এ ছাড়া প্রায় ২০ হাজার লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পাট অধিদপ্তর সরকারের পক্ষে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন, তদারকি, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। চারকোলশিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য পাট অধিদপ্তর যখন যেভাবে প্রয়োজন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে। এ ছাড়া চারকোলশিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।