জনগণের কী প্রয়োজন, সেটি দেখেই দেশে জরিপ-শুমারি করা হবে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে জাতীয় পরিসংখ্যান উপদেষ্টা পরিষদ (এনএসিএস) গঠন করেছে সরকার। সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ যেসব ঘটনার জন্ম হয়, সেসব নিয়ে জরিপ করতে তাগিদ দেবে উচ্চপর্যায়ের এই পরিষদ। পরিসংখ্যানকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে ১৮ সদস্যের এনএসিএস গঠন করা হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এনএসিএসের সভাপতি করা হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রীকে। কমিটিতে বেশ কয়েকজন সচিব আছেন, পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেও রাখা হয়েছে। পরিষদে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য। উপদেষ্টা পরিষদ বছরে দুটি বৈঠক করবে। বৈঠক থেকে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবেন উপদেষ্টারা।
জানতে চাইলে বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এনএসিএস গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো, পরিসংখ্যান নিয়ে আমরা আর কী কী করতে পারি, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া। পাশাপাশি বিবিএস এখন যেসব জরিপ-শুমারি করে, সেগুলো কীভাবে আরও সুন্দরভাবে করা যায়, সেই নির্দেশনা দেবে এই পরিষদ।’
জাতীয় পরিসংখ্যান উপদেষ্টা পরিষদের কাজ কী হবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে পরামর্শ দেবে পরিষদ। পাশাপাশি জাতীয় প্রয়োজনে আরও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহারের উপযোগী তথ্য সংগ্রহের জন্য বিবিএসকে পরামর্শ দেওয়া হবে। উপদেষ্টা পরিষদ দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুমারি ও জরিপ করতে পরিসংখ্যান বিষয়ে অগ্রাধিকার কী হবে, তা ঠিক করে দেবে। উল্লেখ্য, বিবিএসের জনশুমারিসহ বিভিন্ন জরিপ প্রায়ই সমালোচনার জন্ম দেয়।
বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালের আগে একটি পরিসংখ্যান কাউন্সিল ছিল। ওই বছরে পরিসংখ্যান আইন অনুমোদন হয়। আইনটির শর্ত অনুযায়ী ওই কাউন্সিল বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে জরিপ ও শুমারিতে বিতর্ক এড়াতে এবং স্বচ্ছ জরিপ শুমারি করতে নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর রূপনগরে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের জন্য নির্মাণাধীন ১৫ তলাবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক ভবনের দুইতলা পরিসংখ্যান একাডেমির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তারা ওই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের যেভাবে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে, তাতে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি একাডেমি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে যত পরিসংখ্যানবিদ আছেন, অথবা যাঁরা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের জন্য এই একাডেমিতে আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে।