তুমুল ব্যস্ততা দক্ষিণ চট্টগ্রামে

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়ক ও দ্বিতীয় টিউব নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিক, প্রকৌশলীরা। এসব কর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কিছু দোকানপাট। তাদের ব্যবসাও জমজমাট।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে প্রথম টিউবের খননের কাজ শেষ। এখন চলছে যানবাহন চলাচলের রাস্তা তৈরির কাজ।
ছবি: জুয়েল শীল

কর্ণফুলী নদীর পারে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রাম। শান্ত ও নিরিবিলি গ্রামীণ চিরচেনা পরিবেশের অনেকটাই এখন পাল্টে গেছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়কের একাংশ এই গ্রামের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সড়কের জন্য বালু ভরাট হচ্ছে কোথাও। কোথাও চলছে কালভার্ট নির্মাণ। শ্রমিকের আনাগোনাও বেড়েছে। এই গ্রামের মতো দক্ষিণ বন্দর গ্রাম ও বন্দর গ্রামেও চলছে ব্যস্ততা।

গত বুধবার সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে গ্রামগুলোর বদলে যাওয়া ও সেখানকার মানুষের ব্যস্ততা দেখা যায়। কর্ণফুলী টানেলের কর্মযজ্ঞে আছেন ১০০ প্রকৌশলী ও ৮৫০ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে চীনের ২৫০ জন ও দেশের ৭০০ জন। শহর প্রান্ত থেকে টানেলের প্রথম টিউবের কাজ শেষ হওয়ায় এই জনবলের সিংহভাগ এখন আনোয়ারা প্রান্তে কাজ করছেন। গত ডিসেম্বরে আনোয়ারা থেকে দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হয়। আনোয়ারা প্রান্তে পুরোদমে চলছে সংযোগ সড়কের কাজও।

সরেজমিনে দেখা যায়, টানেলের মুখ থেকে উড়ালসেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়কে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। আর চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার কনভেয়ার বেল্টের ওপর দিয়ে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত উড়ালসেতুটির কাজও প্রায় শেষের পথে।

নির্মাণাধীন উড়ালসেতুর নিচে এক পাশে চায়ের দোকান দিয়েছেন আহমেদ সবুজ। কথা বলার সময় নেই তাঁর। বিক্রি কেমন? চায়ের কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে সবুজ মাথা জেঁকে জানালেন, কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর দোকান দিই। শ্রমিকের আনাগোনা বাড়তে থাকায় বেচাকেনাও বাড়ছে।

সবুজের মতো একই কথা বলেন আনোয়ারা পারকি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, টানেলের নির্মাণকাজ ঘিরে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। আগের তুলনায় বিক্রিও বেড়েছে। এ ছাড়া এ এলাকায় জায়গাজমির দামও বাড়তে শুরু করেছে।

আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী দ্বিতীয় টিউব

আনোয়ারা প্রান্তে দুটি টিউবের মুখের (সংযোগস্থল) কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ওঠানামার সড়কটির প্রায় ১০০ মিটার পাকা করা হয়েছে। সড়কের দুপাশে ও টানেলের বাইরের অংশে ৮ থেকে ১০ ফুটের বেশি উঁচু প্রতিরক্ষাদেয়াল দেওয়া হয়েছে।

পতেঙ্গা থেকে আসা প্রথম টিউবের শেষ অংশটি প্রবেশমুখের সঙ্গে সংযুক্ত হয়নি। ওই টিউবের আনোয়ারা প্রান্তের শুরুতে ট্যাংক স্থাপন করে টানেলে সরবরাহ করার জন্য পানি ফিল্টারিং করা হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, আনোয়ারা প্রান্ত থেকে বোরিং মেশিন দিয়ে দিনরাত সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে। এটি মিলিত হবে পতেঙ্গা প্রান্তে।

সম্প্রসারিত হচ্ছে পিএবি সড়ক

টানেলের সংযোগ সড়ক যে পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেটি দুই লেনের। গাড়ির চাপে প্রায় সময় সেখানে জট লেগে থাকে। এতে যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এখন সে সড়ক সম্প্রসারণ করে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী থেকে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এনডিই।

গত বুধবার সকালে সড়ক ধরে যাওয়ার সময় দেখা যায়, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কোথাও এক পাশ খনন করে রাখা হয়েছে। কোথাও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একের পর এক ট্রাক এসে খনন করা অংশে বালু ফেলছে। একই সঙ্গে কালভার্টের কাজও চলছে সমানতালে। আবার সড়ক সম্প্রসারণের জন্য দুই পাশের অনেক গাছ কাটা হয়েছে। আরও গাছ কাটার প্রস্তুতি চলছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজের গতি কিছুটা কম। তারপরও যতটুকু করা সম্ভব, তা করা হচ্ছে।

সড়ক সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে সড়কের দুই পাশের জায়গার মূল্যও বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। সরেজমিনেও দেখা যায়, সড়কের পাশে কিছু কিছু এলাকায় জায়গার মালিকানা উল্লেখ করে ফলক লাগানো হয়েছে। সড়কের বাইরে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় ইট দিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। কেউ কেউ নির্মাণ করছেন ভবন।

উপজেলার শাহ মিরপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় যানজট লেগে থাকে। সড়ক বড় হলে যাতায়াতের দুর্ভোগ আর থাকবে না।

মোহাম্মদপুর এলাকায় কথা হয় আনোয়ারার বারশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টানেল চালু হলে আনোয়ারার চেহারা পাল্টে যাবে। যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা হবে। এতে মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়বে।

তবে একটি আশঙ্কার কথা জানালেন এই জনপ্রতিনিধি। তিনি বলেন, টানেল চালু হলে আনোয়ারায় মানুষের বসবাসের চাপ বেড়ে যাবে। তাই এখন থেকে পয়োনালা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।