দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা

সুরক্ষা, প্রতিরোধ ও প্রচারণামূলক কাজের সমন্বয় না হলে—

  • তিন বছরে আরও ২৭.৬৬% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে।

  • তাতে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।

কাজের সন্ধানে
ছবি। প্রথম আলো

কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই নতুন দরিদ্র মানুষদেরও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া শুধু দারিদ্র্যের পরিসংখ্যানে নজর দিলে হবে না, অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম আয়োজিত কোভিড-১৯ ও উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এক ভার্চ্যুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সব পেশার মানুষের সমস্যা এক নয়। কোনো পেশার মানুষ বেশি অরক্ষিত, আবার কোনো পেশার মানুষ কিছুটা কম অরক্ষিত। সে জন্য দরিদ্র ও অরক্ষিত মানুষের ধরন বিবেচনা করে সরকারের কর্মসূচি প্রণয়ন করা উচিত বলে মনে করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে দেশের মানুষের পেশাভিত্তিক দারিদ্র্য নিয়ে উপস্থাপনা দেন তিনি। বলেন, কারও জন্য সুরক্ষামূলক কর্মসূচি দরকার, কারও জন্য প্রতিরোধমূলক, আবার কারও জন্য প্রচারণামূলক—দরকার এ সবকিছুর সমন্বয়। তা না হলে আগামী তিন বছরে আরও ২৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। তাতে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।

আরও পড়ুন

শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে সায়েমা হক বলেন, কোভিড-১৯-এর মতো মহামারির সময় কে কতটা অরক্ষিত হয়ে পড়ে, তা নির্ভর করে শিক্ষার ওপর। কিন্তু মহামারিতে যাঁরা নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে নগর দরিদ্রদের জীবনে অভিঘাত সবচেয়ে বেশি। তাঁদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি থাকা দরকার বলে তাঁর মত।

অন্যদিকে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। ১ হাজার ৩০০ শ্রমিকের ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে যেখানে প্রতি চারজন শ্রমিকের মধ্যে একজন ডিজিটাল পদ্ধতিতে মজুরি পেয়েছেন, মে মাসে তা দাঁড়ায় প্রতি চারজনে তিনজন। সামগ্রিকভাবে নতুন করে ২০ লাখ শ্রমিক ডিজিটাল মজুরির আওতায় এসেছেন বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের নির্বাহী পরিচালক গাই স্টুয়ার্ট।

আরও পড়ুন

সানেমের সঙ্গে যৌথভাবে এই জরিপ পরিচালনা করেছে মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ। তবে এই ডিজিটাইজেশন ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, জরিপে দেখা গেছে, জুলাই-আগস্ট মাসে এই সংখ্যা কমে আসতে শুরু করেছে।

গাই স্টুয়ার্ট আরও বলেন, ডিজিটাল ইকো সিস্টেম গড়ে তোলা না গেলে এটি অতটা কার্যকর হবে না। শ্রমিকেরা মজুরির একটি বড় অংশ বাড়িভাড়ায় ব্যয় করেন। কিন্তু সেটি দিতে হয় নগদে। শুধু বাড়িভাড়া নয়, সব খরচই তাঁরা নগদে করেন। সে জন্য ক্যাশ আউট করতে তাঁদের হাজারে ২০ টাকার মতো ব্যয় করতে হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া দেওয়াসহ কেনাকাটা করা গেলে এই খরচ তাঁদের হতো না।আবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে স্বচ্ছতা। বাড়িওয়ালা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া নিলে তাঁর আয়ের হিসাব থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ এই স্বচ্ছতা দেখাতে পারবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন গাই স্টুয়ার্ট।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশ নেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। সভাপতিত্ব করেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ রবি শ্রীবাস্তব। কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার গবেষক সম্প্রদায় যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তার প্রশংসা করেন তিনি।