নতুন উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ৫ বছরের কর রেয়াত সুবিধা

এক অর্থবছর শেষে নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। জোর প্রস্তুতি চলছে, যাতে মানুষের চাহিদা পূরণ করে দেশের উন্নয়ন করা যায়। এই শেষ সময়ে উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাজেটে কিছু বিষয় প্রাধান্য দিতে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। এর সুফল পাবে পুরো দেশ।

বাজেটে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ব্যাংক খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিতে হবে; সহজেই যেন প্রশিক্ষণ, বাজারজাত ও বিপণনের সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। নতুন উদ্যোক্তাদের আগামী পাঁচ বছরের জন্য কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হলে অনেকেই উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাজেটে জিডিপির ১০ শতাংশ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সুসংহত করতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনকে যথাযথ বরাদ্দ দিয়ে কুটির ও ক্ষুদ্রশিল্পকে আরও চাঙা করা যেতে পারে।

অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের সংজ্ঞা পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত করে আনুপাতিক হারে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তর করা যেতে পারে। শেয়ারবাজারে ডেবট ডেরিভেটিভ মার্কেট চালুর পাশাপাশি এই বাজার যেন উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে সহায়তা করে, সেদিকে নজর দিতে হবে। স্টার্টআপ উদ্যোগ চালুর আগে যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ না ঠকেন।
নারীদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করতে হবে। স্থানীয় শিল্পকে প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে উৎসাহিত করা যেতে পারে। আমদানি বিকল্প শিল্প খাতের জন্য সুষ্ঠু রাজস্বনীতি গ্রহণ করতে হবে।

রপ্তানিমুখী শিল্প বিকাশে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পুরো রপ্তানি আয় যাতে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে কূটনীতিক চ্যানেলগুলো জোরদার করতে হবে। বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও ইকোনমিক ইনকিউবেটর স্থাপন করতে হবে।

কর আদায়ের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করতে হবে। নারী করদাতাদের জন্য পৃথক আয়কর মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ সাধনে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।

তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান পাঁচ শতাংশ করতে হবে। এতে ভালো ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে।

অর্থ পাচার রোধে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা যেতে পারে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ মেলা ও তাঁদের পণ্য বাজারজাতের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কারণ, তাঁরা পণ্য উৎপাদন করলেও বাজারজাতের অভাবে ভালো দাম পাচ্ছেন না। উদ্যোক্তারা যেন স্বাবলম্বী হন, সে জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের উদ্যোগ প্রয়োজন।

লেখক তিনজন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের উদ্যোক্তা অর্থনীতি কোর্সের শিক্ষক