নতুন গরিবের স্বীকৃতি থাকা দরকার

হোসেন জিল্লুর রহমান

করোনার কারণে দেশে নতুন গরিবের সংখ্যা বেড়েছে। এটি একটি নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই উন্নয়ন আলোচনায় তাদের বাদ না দিয়ে বরং গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই নতুন গরিবদের বাজেটে একটি স্বীকৃতি থাকা দরকার। করোনা সংকটে কাজ হারানো মানুষকে পুরোনো জীবিকায় ফিরে যাওয়ার জন্য বিশেষ সহায়তা দিতে হবে।

নতুন গরিবদের জন্য প্রাথমিক ও দীর্ঘমেয়াদি—এই দুই ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর আগে সংকটে পড়া ৫০ লাখ পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা অনেকেই পাননি। নতুন দরিদ্রদের আর্থিক স্বাধীনতা দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হলে তাদের এই সংকটে বেশ কার্যকর হতে পারে। এই আর্থিক সহায়তা যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া যায়, ততই ভালো। তাই দেরি না করে আগামী বাজেটে উদ্যোগ নিতে হবে।

একটি বড় কর্মসূচির আওতায় নতুন গরিবদের চিহ্নিত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের সহায়তাও লাগবে। এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আমাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার কারণে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুনভাবে গরিব হয়ে গেছে। আগামী অর্থবছরে তাদের অন্তত ৫০ শতাংশকে যদি আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায়, তাহলে বড় কাজ হবে।

নতুন গরিবদের অন্যতম সমস্যা হলো তাঁদের আয় কমে গেছে। কিন্তু খরচের বোঝা কমেনি। পানির দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে দৈনন্দিন জীবনযাপনে এসব পরিবারের খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির বাড়তি বোঝা চাপল। সরকার যদি পানি, বিদ্যুতের না বাড়ায় সেটাও তাদের জন্য বড় সহায়তা হবে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন গরিবদের তাদের পুরোনো জীবিকায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাঁরা ওই পেশায় দক্ষ হয়ে গেছেন। তাঁরা ওই সব পেশায় ফিরে যেতে চান। কিন্তু ওই সব দক্ষ পেশায় ফিরে যেতে না পেরে তাঁরা অদক্ষ পেশার দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য যে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে নতুন গরিবদের আলোচনাটি আনা দরকার। পুরোনো কর্মীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রণোদনার সঙ্গে শর্ত দেওয়া যেতে পারে। সার্বিকভাবে এই কৌশল কী হবে, তা ঠিক করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন দরিদ্রদের খুব বেশি স্থান নেই। বিশেষ করে নগর দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা সহায়তায় আলাদা কোনো কর্মসূচি নেই। অথচ এবারের করোনায় নগর দারিদ্র্য বেশি বেড়েছে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা সহায়তায় নগর দরিদ্রদের জন্য নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন জরুরি। ওই কর্মসূচিতে নতুন ও পুরোনো গরিবেরা যেন সুবিধা পান।

এদিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। সেটি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো উচিত। শুধু খাদ্যসহায়তা নয়; এটিকে পুষ্টিসহায়তা হিসেবে বিবেচনা করে খাদ্যসহায়তার কৌশল পুনর্বিন্যাস করা দরকার। সামাজিক নিরাপত্তা সহায়তা এমন কিছু কর্মসূচি আছে, সেখানে টোকেন বা নামমাত্র সহায়তা দেওয়া হয়। এ ধরনের টোকেন সহায়তা বের হয়ে চলনসই সহায়তা দিতে হবে।