পিপিপি প্রকল্পে কর প্রণোদনা আসছে

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণে বেসরকারি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর প্রণোদনা আসছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। আর কর অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থা পিপিপি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের কাছে এ প্রণোদনা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদ আফসর এইচ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এই চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে এনবিআর ইতিমধ্যে বৈঠকও করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পিপিপি প্রকল্প থেকে যে আয় হবে, তার ওপর কর প্রণোদনা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প দুই ভাগে বিভক্ত হবে। প্রথমটি আবাসন ও পর্যটন ছাড়া ভৌত অবকাঠামো খাত, অন্যটি আবাসন ও পর্যটন খাত।
চিঠিতে আবাসন ও পর্যটন ছাড়া ভৌত অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী ১০ বছর এবং আবাসন ও পর্যটন খাতে সাত বছর কর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। গ্রামীণ বা সুবিধাবঞ্চিত জনগণ উপকৃত হবে—এমন ভৌত অবকাঠামো সম্পর্কিত পিপিপি প্রকল্পের জন্য কর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ১২ বছরের জন্য। পিপিপি কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ফলে যে মূলধনি মুনাফা হবে, তার ওপর আয়কর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে ১০ বছরের জন্য।
এ ছাড়া পিপিপি প্রকল্পে কোনো বিদেশি নিয়োগ হলে, যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর তার জন্য ৫০ শতাংশ আয়কর অব্যাহতি এবং প্রকল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী ১০ বছরের জন্য স্বত্ব (রয়্যালটি) ও কারিগরি মাশুলের ওপর কর অব্যাহতি চেয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপিপি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পর কোন কোন প্রকল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমার সহকর্মীরা কাজ করছেন।’
পিপিপি কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য সরকার যে ধরনের কর অব্যাহতি দিয়েছিল বা এখনো যে ধরনের অব্যাহতি রয়েছে, পিপিপি প্রকল্পের জন্যও একই রকম অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পিপিপি কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পিপিপি প্রকল্পের জন্য কর অব্যাহতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে পিপিপি কার্যালয়ের মুখপাত্র আবুল বাসার গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী যে, পিপিপি প্রকল্পে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণে কর অব্যাহতির বিষয়টি এনবিআর ইতিবাচকভাবে দেখবে।’
পিপিপি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে থাকে। এতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের চুক্তি হয় বা সেবা তৈরির জন্য বেসরকারি খাতকে সরকার নিবন্ধন দিয়ে থাকে। নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি); নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি) এবং নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও)—পিপিপির এ তিনটি পদ্ধতিই প্রচলিত।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; নদী, সমুদ্র ও বিমানবন্দর; সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল; সড়ক ও রেলপথ এবং বড় বড় সেতু নির্মাণ দরকার। সরকারের একার পক্ষে এগুলো করা কঠিন।
অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপির খ্যাতি বিশ্বজোড়া থাকলেও এতে সাফল্যের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। প্রতিবছর ৩৯ হাজার কোটি টাকা হিসাবে পাঁচ বছরে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা পিপিপি উদ্যোগ থেকে পাওয়া যাবে বলে সাত বছর আগেই জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেট বক্তব্যে পিপিপিকে ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নামও দিয়েছিলেন তিনি।
পিপিপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এরপর একটি প্রকল্পও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য সরকার ৪৪টি প্রকল্প চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ২৩ কিলোমিটারর দৈর্ঘ্যের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।