পোশাক ও বস্ত্রকলশ্রমিকদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের করোনার টিকা দেওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে কারখানাগুলো। সুনির্দিষ্টভাবে কবে থেকে শ্রমিকদের টিকা দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য চলতি মাসেই টিকা দেওয়া শুরুর জোর প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান পোশাক ও বস্ত্র খাতের নেতারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ও বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সদস্য কারখানাগুলোকে শ্রমিক-কর্মচারীদের সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে পাঠাতে বলেছে। অন্যদিকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা জানান, তাঁরা সদস্য কারখানাগুলোকে শ্রমিক-কর্মচারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট এলাকার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠাতে অনুরোধ করেছেন।

বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর নেতারা জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে কারখানায় কারখানায় শ্রমিকদের টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য কারখানায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সরা সহযোগিতা করবেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গাজীপুরের চারটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের গত ১৮ জুলাই করোনার টিকাদান শুরু হয়। পোশাকশ্রমিকদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা দেওয়া হয়। কারখানাগুলো হচ্ছে কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা ডেনিম, তুসুকা ওয়াশিং, গাজীপুরের লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্পেরো অ্যাপারেলস ও ভোগরা এলাকার রোজভ্যালি গার্মেন্টস। দুই দিন টিকা দিয়ে ঈদের ছুটির পর টিকা কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, বিধিনিষেধের মধ্যে কারখানা খোলা নিয়ে গত কয়েক দিন ব্যস্ততা গেছে। এখন জোরেশোরে টিকাদান শুরু হবে। ইতিমধ্যে কারখানাগুলোকে শ্রমিক-কর্মচারীদের তথ্য-পরিসংখ্যান সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করার আশা করছি। তবে চট্টগ্রাম ইপিজেডের শ্রমিকদের ৮ আগস্ট টিকা দেওয়া শুরু হবে।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি মাসেই সরকার পোশাকশ্রমিকদের টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করবে। সে জন্য আমরা ৩১ জুলাই সদস্যদের চিঠি দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ, কারখানার পরিচয়পত্রসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের তালিকা পাঠাতে অনুরোধ জানাই। ইতিমধ্যে কারখানাগুলো সে অনুযায়ী তালিকা পাঠাতে শুরু করেছে। আশা করছি, ৭ আগস্ট না হলেও ৮ আগস্ট থেকে কারখানায় টিকা দেওয়া শুরু হবে। ধাপে ধাপে সব কারখানার শ্রমিকেরা টিকা পাবেন। টিকা দেওয়ার পুরো বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করতে আগামী দুই মাসের জন্য ২০-২৫ জন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অবশ্য নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. ইমতিয়াজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, পোশাকশ্রমিকদের টিকা দেওয়া বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো নির্দেশনা আসেনি। ৭ আগস্ট থেকে জেলার ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে আনলে ১৮ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ টিকা নিতে পারবেন।

অন্যদিকে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী ১৩ জুলাই সংগঠনের সদস্যভুক্ত স্পিনিং, উইভিং ও ফেব্রিক প্রসেসিং মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের টিকার আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে চিঠি দেন। পরে ১৯ জুলাই মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারপরই বস্ত্রকলে কত শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন, সেটি জানার উদ্যোগ নেয় বিটিএমএ।

জানতে চাইলে বিটিএমএর অতিরিক্ত পরিচালক মনসুর আহমেদ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে ১৫১টি কারখানা আমাদের কাছে তালিকা পাঠিয়েছে। কারখানাগুলোয় কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক।

বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫২১। তার মধ্যে সুতা উৎপাদনের জন্য স্পিনিং মিল ৪৩৩, কাপড় উৎপাদনের মিল ৮২৭ এবং উৎপাদিত কাপড় প্রক্রিয়াজাত অর্থাৎ ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিল আছে ২৫১টি। অবশ্য তার মধ্যে অনেক মিলই বর্তমানে উৎপাদনে নেই।

পোশাক ও বস্ত্র খাতে কত শ্রমিক কাজ করেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বিজিএমইএ দাবি করে, পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তবে বাস্তবে সংখ্যাটি অনেক কম বলে জানান সংগঠনের নেতারা।