চলতি বছরে দেশের রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় নিয়ে তেমন একটা ভালো আশা দেখাতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদ প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির হার কমে ২ শতাংশে নামবে। এই প্রবণতা আগামী ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে। গত বছর দেশের প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবাসী আয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (নোমাড) এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমাটা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। প্রবাসী আয় কম হলে তা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এতে রিজার্ভ কমবে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছর (২০২১ সাল) বাংলাদেশে ২ হাজার ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)। সেই সুবাদে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত রোজার শুরুতে (মার্চ মাসে) ২৪ শতাংশ উল্লম্ফন ছাড়া গত আট মাসে দেশে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। সর্বশেষ এপ্রিলে ২০১ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কম। গত বছরের এপ্রিলে ২০৭ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। এভাবে চললে আগামী ২০২৩ সালেও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের ঘরেই থাকবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুতের বড় উৎস রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি আয় ৩৫ শতাংশ বাড়লেও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিশ্লেষকেরা জানান, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে হারে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, সে হারে প্রবাসী আয় বাড়ছে না। ফলে এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। সে জন্য ডলারের সংকট বাড়ছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স প্রবাহ কমাটা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। প্রবাসী আয় কম হলে তা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এতে রিজার্ভ কমবে। এ জন্য আমাদের কৌশলী হয়ে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি কমে ২ শতাংশে নামবে। এই প্রবণতা আগামী ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে।
প্রবাসী আয়ে এবারও শীর্ষে ভারত
বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও সাব সাহারার দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধি কমেছে।
২০২১ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানে ছিল ভারত। গত বছর দেশটি প্রবাসী আয় পেয়েছিল ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। একই বছরে চীনকে ছাড়িয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মেক্সিকো। দেশটি পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়া চীনের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপাইন ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার নিয়ে চতুর্থ ও ৩ হাজার ১৫০ কোটি ডলার নিয়ে মিসর পঞ্চম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান ষষ্ঠ (৩ হাজার ১২০ কোটি), বাংলাদেশ সপ্তম (২ হাজার ২২০ কোটি ডলার) স্থানে আছে।
এদিকে রাশিয়ার হামলার শিকার ইউক্রেনে হঠাৎ প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়ে গেছে। চলতি বছর ইউক্রেনে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ২০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।