প্রবাসী আয়ের ৯১% আসছে গ্রামের এজেন্টে
মাত্র আট বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের অধিকাংশ হাটবাজার ও গ্রামগঞ্জে পৌঁছে গেছে। ফলে তাদের মাধ্যমে সহজেই বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাতে পারছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে প্রবাসী আয়ের সুবিধাভোগীদের আয় গ্রহণ করতে বাড়ি থেকে খুব দূরে কোথাও যেতে হচ্ছে না। বাড়ির পাশের কোনো এজেন্টের কাছ থেকেই তাঁরা প্রবাসীদের পাঠানো আয় সংগ্রহ করতে পারেন। সে জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা দ্রুত বাড়ছে। এখন প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রবাসী আয় বিতরণ হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে।
এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে যে আয় আসছে, তার ৯১ শতাংশ আসছে গ্রামের এজেন্ট ও আউটলেটগুলোতে। এ সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে। আবার ঋণও পাচ্ছেন কেউ কেউ। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে। চাঙাও হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যও। এতে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ৬ হাজার ৮৭১ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ২৯০ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। তবে একই সময়ে সব মাধ্যম মিলিয়ে বৈধ পথে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছিল। তাতে দেখা যায়, প্রবাসী আয়ের ১২ শতাংশের বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এসেছে।
আর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা এসেছে গ্রামীণ এজেন্ট ও আউটলেটগুলোর মাধ্যমে। অর্থাৎ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসা আয়ের ৯১ শতাংশই এসেছে গ্রামীণ এলাকায়। বাকি ৬ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ এসেছে শহরাঞ্চলে।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাড়ির পাশে এজেন্ট পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু ব্যাংক প্রবাসী আয়ে সরকারি প্রণোদনার সঙ্গে নিজেদের উদ্যোগেও কিছু বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে এজেন্ট ব্যাংকিং–সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিকটজনদের কাছে প্রবাসী আয় পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ জন্য আয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভবিষ্যতে প্রবাসী আয়ের বড় অংশই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
এদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যত প্রবাসী আয় আসে, তার পুরোটাই তুলে নেন না সুবিধাভোগীরা। সাধারণত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ হিসাবে জমা রাখেন। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আমানতও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে টাকার চেয়ে ডলারের চাহিদা তুঙ্গে। এ জন্য দামও বাড়ছে। তাঁরা ডলার সংগ্রহের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই বাড়তি প্রণোদনাসহ নানা উপহারও দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ৭৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমেই এসেছে ৫৪ শতাংশ আয়। এরপর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ১১ শতাংশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৩ শতাংশ প্রবাসী আয় এসেছে।
জানতে চাইলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলাকে বলেন, ‘এজেন্টদের বেশির ভাগই রয়েছে গ্রামে ও বাজারে। এ কারণে আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীরা এজেন্টদের বেছে নিচ্ছেন, যাতে সুবিধাভোগীরা দ্রুত টাকা উত্তোলন করতে পারেন। সে জন্য আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসাও বেড়ে গেছে।’
প্রবাসীরা গত বছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস কম হলেও সার্বিকভাবে ২০২১ সালে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে, তা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ২০৭ কোটি মার্কিন ডলার। প্রবাসীরা এর আগে ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন। ফলে গত বছরে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে, তা এখন পর্যন্ত এক পঞ্জিকা বছরে সর্বোচ্চ।