প্রবাসী আয় পাঠানোর ঝামেলা কমাতে হবে

সেলিম রায়হান

প্রবাসীরা বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন ১ ডলারের বিপরীতে কত টাকা তিনি পাবেন। এরপর তাঁরা বিবেচনায় নেন, কত দ্রুত ওই টাকা পাঠানো যাবে; অথবা সেই প্রক্রিয়া সহজ, না কঠিন। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামে বড় পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রবাসীদের আয়ের পুরোটা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

যেহেতু ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং ব্যাংকগুলো এখন কিছুটা বাড়তি দামে প্রবাসী আয় নিয়ে আসতে পারবে। তাতে প্রবাসী আয় প্রত্যাবসানে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়। প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে চাইবেন। অন্যদিকে ব্যাংকেরও ডলার প্রয়োজন—তারাও কিনতে চাইবে।

সরকারিভাবে প্রবাসী আয়ে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা যেটা দেওয়া হচ্ছে, সেটার পুরোটা এখন আর প্রয়োজন নেই। এটা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে যে প্রক্রিয়ায় প্রবাসী আয় পাঠানো হয়, ওই সময় ও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে কিছু একটা থাকতে পারে। সেটা হয়তো সর্বোচ্চ ১ শতাংশ প্রণোদনা।

এ ক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে প্রবাসী আয় পাঠানোর চ্যানেলে সরকার কাঠামোগত কিছু সংস্কার করতে পারে। যেমন আয় প্রত্যাবাসনের সময়টা কীভাবে আরও কমিয়ে নিয়ে আসা যায়। অনেক প্রবাসীর অভিযোগ আছে, আনুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে তাঁদের নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। এগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠালে টাকা ওই প্রবাসীর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগ প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দেবে।

এ ছাড়া বাজেটে স্পষ্ট করা যেতে পারে—প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে সেবা কেমন হবে, তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া, দেশে আসার পরে ট্যাক্সি ভাড়া করছে সেটার পদ্ধতি কী হবে ইত্যাদি। এসব সুযোগ-সুবিধা তারা ঠিকমতো পাচ্ছে কি না, বিষয়টি তদারকির সরকারি ব্যবস্থাও থাকতে হবে। কারণ, আমাদের এখানে পরিকল্পনায় অনেক কিছু থাকে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন হয় না।

সরকারের যেসব বিভাগ প্রবাসীদের সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি প্রবাসীদের প্রতি আমাদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, সেটা নিয়েও আলাদা করে ভাবতে হবে। তাদের সঙ্গে আমরা কী ধরনের ব্যবহার করছি, সেটা বেশ গুরুত্ব বহন করে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদেরও তাদের দিক থেকে সহযোগিতা করতে হবে।

এ ছাড়া প্রবাসীদের অনেকেই আছেন, যাঁরা হয়তো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভালোমতো বোঝেন না। ফরমগুলো ঠিকভাবে পূরণ করতে সক্ষম নন। তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। কোনোভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অবহেলা করা যাবে না। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় যদি পরিবর্তন করা যায়, তাহলে আশা করা যায়, প্রবাসীরা আরও দায়িত্ববান হয়ে উঠবেন। এবং সেটা প্রবাসী আয়সহ জনশক্তি রপ্তানিতে প্রভাব রাখবে।

সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম