বস্ত্রকলশ্রমিকদের টিকা দিতে তথ্য সংগ্রহ শুরু
বস্ত্রকলে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনার টিকা দিতে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। এ জন্য গতকাল সোমবার সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নির্ধারিত ছকে শ্রমিক-কর্মচারীদের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী ১৩ জুলাই সংগঠনের সদস্যভুক্ত স্পিনিং, উইভিং ও ফেব্রিক প্রসেসিং মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের টিকার আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে চিঠি দেন। পরে ১৯ জুলাই মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার পরপরই বস্ত্রকলে কত শ্রমিক-কর্মচারী আছে, তা জানার উদ্যোগ নেয় বিটিএমএ।
স্বাস্থ্যসচিবকে লিখিত চিঠিতে বিটিএমএর সভাপতি উল্লেখ করেন, জাতীয় স্বার্থে বস্ত্রকলের শ্রমিক-কর্মচারী সবাইকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে সরকার ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। যার বড় অংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত থেকে আসবে। ফলে এই খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের সম্মুখযোদ্ধা হিসেব বিবেচনা করে তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোহাম্মদ আলী চিঠিতে বলেন, বিটিএমএর সদস্য কারখানাগুলো ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও শ্রীপুর এবং ময়মনসিংহ, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় অবস্থিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিটিএমএর অঞ্চলগত দিক বিবেচনায় নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করলে তা ফলপ্রসূ হবে।
বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫২১। তার মধ্যে সুতা উৎপাদনের জন্য স্পিনিং মিল ৪৩৩, কাপড় উৎপাদনের মিল ৮২৭ এবং উৎপাদিত কাপড় প্রক্রিয়াজাত অর্থাৎ ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিল আছে ২৫১টি। অবশ্য তার মধ্যে অনেক মিলই বর্তমানে উৎপাদনে নেই।
বিটিএমএর অতিরিক্ত পরিচালক মনসুর আহমেদ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরই আমরা বস্ত্রকলের কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা জানার উদ্যোগ নিয়েছি। সে জন্য নির্দিষ্ট ছকে সংগঠনের সদস্য কারখানার কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সম্ভব না হলে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে তাদের জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে বস্ত্রকলের শ্রমিকেরা করোনার টিকা পাবেন।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গাজীপুরের চারটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ১৮ জুলাই করোনা প্রতিষেধক টিকাদান শুরু হয়। পোশাকশ্রমিকদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা দেওয়া হয়। কারখানাগুলো হচ্ছে কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা ডেনিম, তুসুকা ওয়াশিং, গাজীপুরের লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্পেরো অ্যাপারেলস ও ভোগরা এলাকার রোজভ্যালি গার্মেন্টস।
পোশাকশ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, প্রথম দিনে চারটি কারখানার ১০ হাজার শ্রমিককে মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব শ্রমিককে টিকার আওতায় আনা হবে। শ্রমিকদের টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে না। তবে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র ও কর্মস্থলের পরিচয়পত্র লাগবে।