বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে নতুন চিন্তার আহ্বান

রেহমান সোবহান

কোভিড-উত্তর পৃথিবীতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কাঠামোগত পুনর্গঠন প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। চীন ইতিমধ্যে প্রাক্-কোভিড পর্যায়ে ফিরে গেছে। চীন যেসব দেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, তাদের পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হবে, যেমন ভিয়েতনাম। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ অন্যদের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করেন রেহমান সোবহান।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের এক অধিবেশনে গতকাল শুক্রবার রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।

আঞ্চলিক সংযোগের দিক থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। সংযোগ দুর্বলতার কারণে এই অঞ্চল কোনো সংকটেই সেই অর্থে একত্রে কাজ করতে পারে না। আক্ষেপ নিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করা গেল না। অনানুষ্ঠানিকভাবে মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে এল। ফলে করোনাভাইরাসের ডেলটা ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক খাতে বরাদ্দ খুবই কম। অমর্ত্য সেনের মতো অর্থনীতিবিদ সারা জীবন এ নিয়ে অনেক কথা বললেও বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। সব দেশেই কমবেশি এক অবস্থা। এই দুর্বল সামাজিক খাত মহামারির মতো দুর্যোগ অপ্রতুল হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান।

অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ দীপক নায়ার। তিনি বলেন, মহামারিতে অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তা ঠিক, কিন্তু মহামারির চেয়ে বড় ঘাতক হচ্ছে দারিদ্র্য, অপুষ্টি, শিক্ষার অভাবসহ নানা ধরনের রোগ। ফলে চার ঘণ্টার নোটিশে ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকার মধ্যে যে ভারসাম্য আনা দায়িত্ব ছিল, ভারত সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি আলোচনার চৌহদ্দি নির্ধারণ করে দেন—মহামারির গুরুত্ব বুঝতে সরকারের সফলতা/ব্যর্থতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ, মহামারির শিক্ষা ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া—এই চারটি বিষয়ে আলোচনার জন্য আলোচকদের আমন্ত্রণ জানান তিনি।

দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় জিডিপির সংকোচন সত্ত্বেও গত অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন রেহমান সোবহান। এ ছাড়া মহামারির ধাক্কায় কত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন রেহমান সোবহান। তবে সানেম মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে জরিপ করেছে। সে জন্য রেহমান সোবহান সানেমের প্রশংসা করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম রায়হান বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও পরিসংখ্যানের ঘাটতি দেখা গেছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ খানাজরিপ হয়েছে ২০১৬ সালে। আর ভারতে হয়েছে ২০১১ সালে।

যাদের ব্যবস্থাপনা ভালো, মহামারি মোকাবিলাতেও তারা সফল—এ কথা বলে ভুটানের প্রশংসা করেন রেহমান সোবহান। বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় তারাই সবচেয়ে ভালো করেছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দেশে ফেরার পর ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিন করেছিলেন।