বিপুল অঙ্কের 'পেট্রোডলার' প্রত্যাহার হবে

বিশ্ব আর্থিক বাজার থেকে বড় অঙ্কের ‘পেট্রোডলার’ (তেল রপ্তানির অর্থ) প্রত্যাহার হচ্ছে
বিশ্ব আর্থিক বাজার থেকে বড় অঙ্কের ‘পেট্রোডলার’ (তেল রপ্তানির অর্থ) প্রত্যাহার হচ্ছে

বিশ্ব আর্থিক বাজার থেকে বড় অঙ্কের ‘পেট্রোডলার’ (তেল রপ্তানির অর্থ) প্রত্যাহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে অব্যাহত বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে তেল রপ্তানিকারক প্রধান দেশগুলো এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্যরা বিশ্ব আর্থিক বাজার থেকে ৩১৬ বিলিয়ন বা ৩১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ তুলে নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অর্থ বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ কোটি টাকার সমান। ফরাসি ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিএনপি পারিবাস এই আনুমানিক হিসাবটি দিয়েছে্।
তেলের দাম কমলে আয় কমবে—এমন আশঙ্কায় রপ্তানিকারক দেশগুলো অর্থনীতি সামাল দিতে বিশ্ব আর্থিক বাজারে তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে একটা অংশ তুলে নেবে। এর আগে প্রায় এক দশক ধরে বিপুল পরিমাণ তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধির সুবাদে তেল বিক্রি বাবদ প্রচুর অর্থ আয় করে, যা তারা বৈশ্বিক সম্পদ খাতে বিনিয়োগ করে আসছে। এ সময়ে তারা মার্কিন সিকিউরিটিজ থেকে শুরু করে হাই-গ্রেড করপোরেট বন্ড, শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে বড় অঙ্কের অর্থ খাটিয়েছে।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিচালক জর্জ আবেদ বলেন, তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সুবাদে ২০১২ সালে ওপেকের সদস্যদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ, হাই-গ্রেড করপোরেট বন্ড, শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে মোট ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। আগামী বছরে তা অবশ্য ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে, যদি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৮ ডলারের নিচে থাকে।
পেট্রোডলারের বিনিয়োগের কিছু উদাহরণ এখানে তুলে ধরা যায়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যাররডস ও ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে কিনেছে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার। আরেক তেল রপ্তানিকারক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবি সভরেন ওয়েলথ ফান্ড নিউইয়র্কের চাকচিক্যময় টাইম ওয়ার্নার ভবনের একটি অংশ কিনে নিয়েছে।
পেট্রোডলারের ক্রমাগত জোগানের ফলে বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় তারল্যের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে একদিকে সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে ঋণের সুদহার কমে যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরের মধ্য জুন থেকে এ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম অন্তত ৪০ শতাংশ কমে ৭০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতি সামাল দিতে বিশ্ব আর্থিক বাজার থেকে তাদের পুঁজি প্রত্যাহার করতে হবে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে সৌদি আরবসহ কিছু দেশ বেকায়দায় পড়বে না, যাদের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে। কিন্তু রাশিয়া, ইরান ও ভেনেজুয়েলার মতো তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল কয়েকটি দেশে আবার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস