বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক
ভোজ্যতেল নিয়ে সিদ্ধান্ত ১৬ দিন পর
ভোজ্যতেলের আমদানি পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে ভালো। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা চান দাম বাড়াতে।
সয়াবিন ও পাম তেলের দাম আরেক দফা বাড়াতে ব্যবসায়ীরা এককাট্টা হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটু থামিয়েছে তাঁদের। মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা তিন সপ্তাহ আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল। মন্ত্রণালয় মানেনি। এই ফাঁকে এক দফা বৈঠক করার পর কয়েকটি পরিশোধন কারখানাও সরেজমিন ঘুরে এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল।
গতকাল বুধবার ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আরেক দফা বৈঠক, যাতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যথাযথ হিসাব-কিতাব ছাড়া কিছু করা যাবে না। আর এ জন্য সময় লাগবে কমপক্ষে ১৬ দিন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দাম বাড়ার হলে বাড়বে, কমার হলে কমবে। তবে বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
২ জানুয়ারি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল, সয়াবিনের দাম লিটারে অন্তত ৮ টাকা এবং পাম লিটারে ১১ টাকা বাড়াবেন তাঁরা। নাখোশ বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমাদের না জানিয়ে নিজেরা কিছু দাম বাড়িয়েছিলেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান দামই থাকবে। সবকিছু বিবেচনা করে এরপর যেটা সুবিধাজনক হয়, সেটাই করব।’
বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) পক্ষ থেকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেওয়া হয়। চাহিদার তথ্য উল্লেখ করে এতে জানানো হয়, শর্ষে, সয়াবিন ও পাম অলিন মিলিয়ে দেশে মোট ২০ লাখ টন বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ভোজ্যতেলের। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় দুই লাখ টন, বাকিটা আমদানি করতে হয়। আমদানির মধ্যে রয়েছে ৫ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, ২৪ লাখ টন সয়াবিনবীজ, যা থেকে তেল পাওয়া যায় ৪ লাখ টন এবং ১১ লাখ টন পাম অলিন।
বিটিটিসি আমদানির একটি চিত্রও তুলে ধরে গতকাল। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে পরিশোধিত, অপরিশোধিত ও তেলবীজ মিলিয়ে ভোজ্যতেল আমদানিতে যে পরিমাণ ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে তা থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার টন বেশি। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তিও হয়েছে ৩৪ হাজার টন বেশি। ফলে আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো আছে।
সংস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারদর নিয়েও একটি চিত্র তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রীর সামনে। সেখানে জানায়, এক বছরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছ ৩৮ শতাংশ। ১৮ জানুয়ারিতে ছিল প্রতি টন ১ হাজার ৩৪৬ মার্কিন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ৯৭৮ ডলার। তবে এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ৩১৮ ডলার। একইভাবে অপরিশোধিত পাম অলিনের দাম বেড়েছে এক বছরে ৩৫ শতাংশ।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে তথ্য নিয়ে বিটিটিসি বৈঠককে জানিয়েছে, এক বছরে স্থানীয় বাজারে খোলা সয়াবিন ২৮ শতাংশ, ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন ২৫ শতাংশ এবং খোলা পাম অলিনের দাম ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল ভারতের শুল্ক কাঠামোর প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের শুল্ক কাঠামো আমাদের চেয়ে কম। আমাদের যেখানে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ, তাদের সেখানে ৫ শতাংশ। এসব বিবেচনা করে দেখতে হবে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের একটু সময় দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’
বৈঠকে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে টিপু মুনশি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমানে যে দাম আছে, তা থেকে কিছুটা হলেও কমাতে চেষ্টা করুন। আর সামনে যেহেতু রোজার ঈদ আছে, ফলে স্বাভাবিকভাবে ঋণপত্র খুলুন।’
খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা ১৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার খোলা পাম অলিন বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকায়।