ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড
মিরপুরের ক্রিকেটপাড়ায় আধুনিক আবাস
মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে প্রশিকার মোড়ে ‘ইস্টার্ন নবারুণ রেসিডেন্সেস’ নামে ৮৬টি ফ্ল্যাটের খোলামেলা এক আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলছে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড।
কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে টান টান উত্তেজনা। সাকিব আল হাসান ব্যাট করছেন, অপরাজিত ৭২ রানে। তিন বলে ছয় রান করতে পারলেই বাংলাদেশ সিরিজ জিতে যাবে। দেশের মাটিতে আরেকটি সিরিজ জয়ের উদ্যাপন করতে স্টেডিয়ামের বাইরেও শত শত তরুণ ইতিমধ্যে জড়ো হয়েছেন। প্রথম দুই বলে দুই রান। শেষ বলে প্রয়োজন চার রান। সাকিব কি পারবেন? উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। শেষ বলটি করতে দৌড়ে আসছেন প্রতিপক্ষের বোলার। এদিকে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবও ব্যাট হাতে প্রস্তুত। এরই মধ্যে মাঠের প্রায় সব দর্শক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন।
ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো আবাসন প্রকল্পের কথা জানাতে কেন ক্রিকেট মাঠে ঢুকে গেলাম, সেই প্রশ্ন করবেন নিশ্চয়ই! যোগসূত্র কিন্তু আছে। কারণ, রাজধানীর মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে হাঁটাদূরত্বেই ইস্টার্ন হাউজিং গড়ে তুলছে আধুনিক আবাস। আর এটি হতে যাচ্ছে মিরপুর এলাকায় দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই আবাসন প্রতিষ্ঠানের প্রথম অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট প্রকল্প। ইস্টার্নের নিজস্ব ৩৩ কাঠা জমির ওপর গড়ে ওঠা ‘ইস্টার্ন নবারুণ রেসিডেন্সেস’ নামের প্রকল্পটিতে আছে ৮৬টি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া প্রকল্পটির নিচতলায় রাখা হয়েছে একটি সুপারশপ করার মতো বাণিজ্যিক স্থান।
মেট্রোরেলের কাজ বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কারণে সড়কে যানজট লেগেই থাকে। তারপরও ১০ অক্টোবর ভরদুপুরে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিনিট ছয়েকের মধ্যেই ইস্টার্ন নবারুণে পৌঁছালাম। এর মধ্যে অবশ্য আড়াই মিনিট স্টেডিয়ামের কোনার সিগনালে। যা-ই হোক, ক্রিকেটপাড়া পার না হতেই বেসরকারি সংস্থা প্রশিকার প্রধান কার্যালয়। তার পাশেই ইস্টার্ন নবারুণ রেসিডেন্সেস।
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের এই প্রকল্পটির অবস্থানটা বেশ চমৎকার। সেখানে আসা-যাওয়ার অনেকগুলো বিকল্প পথ রয়েছে। ১০ নম্বর গোলচত্বর বাসস্ট্যান্ডে যেমন সহজে আসা যায়, তেমনি মিরপুর ১ ও ১২ নম্বর দিয়েও যাতায়াত সম্ভব। আবার হেঁটে কিংবা রিকশায় চড়ে অল্প সময়েই মেট্রোরেলের ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং ১১ নম্বর স্টেশনেও যাওয়া যাবে। তার বাইরে হাতের নাগালেই রয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ, ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, মনিপুর স্কুল, মিরপুর বাংলা কলেজ, ন্যাশনাল বাংলা হাইস্কুল, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর বাংলা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, স্কলাসটিকা স্কুল, হারমান মেইনার স্কুল, অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে আশপাশেই। বিনোদনের জন্য জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন। ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশেই আছে সুইমিংপুল। সিনেমা হলও আছে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে।
সামনে-পেছনে ইস্টার্ন নবারুণ রেসিডেন্সেসের দুটি ভবন দাঁড়িয়ে গেছে। সামনের ভবনটি ১২ তলা, আর পেছনেরটি ১৩ তলা। নিচে দুটি বেসমেন্টের সঙ্গে নিচতলার একটি বড় অংশজুড়ে থাকছে গাড়ি পার্কিং। নিচতলার সামনের দিকে রয়েছে সুপারশপের জন্য নির্ধারিত জায়গা। বর্তমানে ভবনের আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ চলছে। সব কাজ শেষ হতে আরও দেড় থেকে দুই বছর লেগে যেতে পারে বলে জানালেন ইস্টার্নের কর্মকর্তারা।
নবারুণে পৌঁছাতেই স্বাগত জানালেন ইস্টার্নের কর্মকর্তা মাসুদ রানা। বললেন, পুরো প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ জায়গাই ফাঁকা। চারপাশে থাকবে হাঁটার জায়গা। ফলে বাসিন্দাদের সকালে কিংবা বিকেলে হাঁটার জন্য প্রকল্পের বাইরে না গেলেও চলবে। বাচ্চাদের খেলার জন্যও ছোট্ট একটা সবুজ মাঠ থাকবে। তা ছাড়া প্রথম তলায় থাকছে প্রকল্পের বাসিন্দাদের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কমিউনিটি হল। সেখানে অনায়াসে ২০০-২৫০ জন অতিথির একসঙ্গে বসার ব্যবস্থা থাকবে। তার পাশেই রয়েছে ব্যায়ামাগার। এক পাশে আছে নামাজের জায়গা। দুটি ভবনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে প্রতিটি ফ্ল্যাটেই আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। দুটি ভবনের মধ্যে ২২-২৩ ফুট দূরত্ব রয়েছে।
প্রতিটি ভবনের প্রতিটি তলায় চারটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ৩৯১ বর্গফুট ও ১ হাজার ৪৫৭ বর্গফুট। আর প্রতিটি ফ্ল্যাটেই একাধিক ব্যালকনি, তিনটি শয়নকক্ষ ও বাথরুম, একটি খাবার ও বসার ঘর এবং গৃহকর্মীর জন্য আলাদা একটি বাথরুম রয়েছে। ইস্টার্নের অন্য অনেক প্রকল্পের মতোই এখানকার ফ্ল্যাটগুলোও আলাদা। ফলে এক ফ্ল্যাটের শব্দ আরেকটিতে আসার সুযোগ নেই। প্রতিটি ভবনে দুটি করে মোট চারটি লিফট থাকছে। তাই অনেক বাসিন্দা, লিফটের জন্য মিনিটের পর মিনিট অপেক্ষা, এমন দুশ্চিন্তার অবকাশ নেই।
গ্রাহকদের বোঝার সুবিধার জন্য একটি ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জা করছে ইস্টার্ন। কাজ চলছে, এমন সময়েই আমরা গেলাম। ভরদুপুর। কৃত্রিম আলো ছাড়াই সব কক্ষ ঝকঝকে। ব্যালকনিটা মাঝারি আকারের। সেখান থেকেই চোখে পড়ল একটা আমগাছ। মাসুদ রানা বললেন, গাছটি থাকবে। উত্তর ও পশ্চিমে আরও কিছু গাছ রয়েছে। সঙ্গে আরও কিছু গাছ লাগানো হবে। তার মানে সবুজের মধ্যে বসবাস করার সুযোগ পাবেন প্রকল্পের বাসিন্দারা।
হঠাৎ কী খেয়াল হলো, সাজানো-গোছানো ফ্ল্যাট ছেড়ে সামনের একটিতে ঢুকে পড়লাম। কাঠামোটি ছাড়া আর কিছু এখনো সম্পন্ন হয়নি। সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলাম। সামনে ৬০ ফুট সড়ক। তবে বিরক্তি উসকে দেয় এমন কিছু নজরে এল না। ওপরে তাকাতেই দেখা গেল নীল আকাশ। সব ফ্ল্যাটই বেশ খোলামেলা। দিনের বেলায় বিদ্যুতের আলো না হলেও হয়তো চলবে।
আচ্ছা, লেখার শুরুতে যে ক্রিকেট ম্যাচের বর্ণনা দিচ্ছিলাম, সেটি কিন্তু কাল্পনিক। তাই ম্যাচের ফলাফল নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তায় থাকবেন না। এদিকে তো আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো শুরু হয়ে গেছে...।
• ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আবাসন প্রকল্প সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে ১৬৭২১ নম্বরে ফোন করতে পারেন।