যেভাবে এসি দুর্ঘটনা এড়াবেন
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিন দিন শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) ব্যবহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুসারে, দেশে গত দুই বছরে ৭১টি এসি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকার।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকে আগুন লাগলে তা জীবনের জন্য হুমকির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এসি ত্রুটিপূর্ণ হলে এমন ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এসি দুর্ঘটনার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে জীবনকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদে রাখা সম্ভব।
সারা বিশ্বেই এসি থেকে দুর্ঘটনায় তথা অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অগ্নিনিরাপত্তা সংস্থার তথ্য অনুসারে, এসিজনিত দুর্ঘটনায় সেই দেশে বছরে গড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়। আর ক্ষতি হয় আট কোটি টাকার বেশি সম্পদের। বাংলাদেশেও দিন দিন এসির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুসারে দেশে গত দুই বছরে ৭১টি এসি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকার।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এসি স্থাপন ও সংযোগব্যবস্থায় ত্রুটি, অতিরিক্ত তাপ, ময়লা ও দূষণ, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং আশপাশে দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি—এগুলোই সাধারণত এসি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
এসি মূলত কক্ষের গরম বাতাস কম্প্রেসর যন্ত্রের মাধ্যমে ঠান্ডা করে পুনরায় তা কক্ষে ফেরত পাঠায়। এই প্রক্রিয়ায় কম্প্রেসরের গ্যাসের চাপ সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করলেই এসি বিস্ফোরিত হতে পারে। এ সম্পর্কে ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনালের সেবা বিভাগের প্রধান নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, এসির ক্ষেত্রে কম্প্রেসরের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ব্র্যান্ডের এসি না হলে কম্প্রেসরসহ অন্যান্য যন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করে না। এ ছাড়া স্থাপনের সময় ঠিকভাবে সংযোগ দেওয়া না গেলে
কিংবা পাইপের কোথাও ছিদ্র হলে তাতেও কম্প্রেসরের চাপ বাড়ে। এতে কক্ষ যেমন প্রয়োজন অনুসারে ঠান্ডা হয় না, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে।
এসির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ কম্প্রেসর, কনডেনসার ও বায়ু প্রবাহের সংযোগ লাইনে দূষণ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুসারে বায়ু দূষণে ২০২১ সালে বিশ্বে সবার ওপরে স্থান পায় বাংলাদেশ। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। সুতরাং এসি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে দূষণের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, এসির মধ্যে ধুলা জমে গেলে তা অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কনডেনসারে ময়লা জমলে এসি তাপ বাইরে বের করতে পারে না। এতে তাপ ও চাপ বেড়ে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়।
তবে বাংলাদেশে এসি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বাহ্যিক কারণকেই প্রধান বলে মনে করা হয়। গ্যাসের লাইনে ছিদ্র কিংবা রুমে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে বড় অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ প্রায়ই পত্রিকার খবর হয়। সে জন্য দুর্ঘটনা এড়াতে এসির যত্ন নেওয়া ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি কক্ষে যাতে কোনো দাহ্য পদার্থ না থাকে, তা নিশ্চিতে জোর দিতে হবে।
বৈদ্যুতিক তারের শর্টসার্কিটের কারণেও এসি দুর্ঘটনা ঘটে। এই হারও কিন্তু কম নয়। বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ ঠিকভাবে না লাগানো হলে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। তাই স্থাপনের আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ এসির জন্য উপযোগী কি না, সেটি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়তি তাপমাত্রায় এসির কার্যক্ষমতা না বুঝে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়।
সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের পণ্য সেবা বিভাগের প্রধান সাদাত শাহরিয়ার। তিনি বলেন, নিয়মিত ফিল্টার, কয়েল ও সংযোগ লাইন পরিষ্কার করা, কম্প্রেসরের কার্যক্ষমতা ও বিদ্যুতের সংযোগ যাচাই করা উচিত। এ জন্য ব্যবহারকারীদের বছরে অন্তত দুবার দক্ষ কর্মী দিয়ে এসি সার্ভিসিং করানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সাদাত শাহরিয়ার আরও বলেন, এসি কোনো বিপজ্জনক যন্ত্র না। সারা বিশ্বেই এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসির মধ্যে যেসব রাসায়নিক, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আছে, তার কোনোটির মাধ্যমেই স্বাভাবিক অবস্থায় অগ্নিকাণ্ড ঘটার কথা নয়। যেসব দুর্ঘটনা হচ্ছে, তার অধিকাংশই ঘটছে মূলত বাহ্যিক কারণে। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এসি বিপজ্জনক হবে না।