সাক্ষাৎকার
রডের কাঁচামালের বড় উৎস জাহাজভাঙা শিল্প
পুরোনো জাহাজ আমদানিতে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মোস্তফা হাকিম গ্রুপ। পুরোনো জাহাজের বাজার, এ শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন গ্রুপটির পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: জাহাজভাঙা শিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সরওয়ার আলম: পুরোনো জাহাজ আমদানির ওপর জাহাজভাঙা শিল্প সচল থাকে। টানা তিন বছর বিশ্ববাজারে পুরোনো জাহাজভাঙায় শীর্ষস্থানে ছিল বাংলাদেশ। তবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর থেকে বিশ্ববাজারে পুরোনো জাহাজের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ট্যাংকার ও যাত্রীবাহী জাহাজ ছাড়া অন্য জাহাজ সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে অনেকগুলো ইয়ার্ড খালি পড়ে আছে। চাহিদা অনুযায়ী জাহাজ না পাওয়ায় এই খাতে আগের মতো চাঙাভাব এখন নেই।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: জাহাজভাঙা শিল্পে এক-দুই বছর ধরে শীর্ষস্থানে ওঠে এসেছে শিল্পগ্রুপগুলো, যাদের রড কারখানা রয়েছে। এর কারণ কী?
সরওয়ার আলম: বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরার দাম গত বছরের নভেম্বর থেকে বেড়েছে। আবার সহজে পাওয়াও যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও আগের চেয়ে এক-দুই মাস বেশি সময় লাগছে আমদানিতে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হলো পুরোনো জাহাজ। জাহাজভাঙা কারখানা থেকে যেসব গলনশীল লোহা পাওয়া যায়, তার মান খুবই ভালো। রড তৈরির কাঁচামালের গুণগতমান বজায় রাখা এবং কাঁচামালের সরবরাহ ঠিক রাখতে যাঁদের কারখানা আছে, তাঁরা এখন পুরোনো জাহাজ আমদানি বাড়িয়েছেন। এ কারণে এক-দুই বছর ধরে যাঁদের রড কারখানা রয়েছে, তাঁরাই জাহাজভাঙা শিল্পে শীর্ষ পর্যায়ে এসেছেন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এ শিল্পে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে অগ্রগতি কেমন?
সরওয়ার আলম: আগের তুলনায় জাহাজভাঙা শিল্পে কর্মপরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। দুর্ঘটনার হার কমেছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একটি ইয়ার্ড স্বীকৃতি পেলেও ১০-১৫টি ইয়ার্ডকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে রূপান্তরের কাজ চলমান। কারখানাগুলোতে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক ক্রেন। শিল্প মন্ত্রণালয় নিবিড় তত্ত্বাবধান করছে। ২০২৩ সালের মধ্যে চালু কারখানার অধিকাংশই পরিবেশবান্ধব কারখানায় রূপ নেবে বলে আশা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা দরকার। কারণ, সরকার এই শিল্প থেকে প্রতিবছর দেড় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: পুরোনো জাহাজ আমদানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে মোস্তফা হাকিম গ্রুপ। আপনাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বলুন।
সরওয়ার আলম: মোস্তফা হাকিম গ্রুপ জাহাজভাঙা কারখানায় যুক্ত ১৯৮০ সাল থেকে। বাবা-চাচার হাত ধরে এখন আমরা দ্বিতীয় প্রজন্ম এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। বর্তমানে গ্রুপটির ১২টি ইয়ার্ড রয়েছে। আমরা মূলত পুরোনো জাহাজ আমদানি করছি নিজেদের রড কারখানায় কাঁচামাল জোগান দিতে। আমাদের গোল্ডেন ইস্পাত ও এইচএম স্টিল নামে দুটি স্বয়ংক্রিয় রড তৈরির কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া আধা স্বয়ংক্রিয় কারখানা রয়েছে চারটি। এসব কারখানার কাঁচামালের ৫০-৬০ শতাংশই আমাদের নিজস্ব ইয়ার্ড থেকে সরবরাহ হয়। এতে রডের গুণগতমানও ভালো পাওয়া যায়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এ দেশে জাহাজভাঙা শিল্পের ভবিষ্যৎ কেমন?
সরওয়ার আলম: জাহাজভাঙা কারখানা অন্তত সাতটি শিল্পের কাঁচামাল জোগান দেয়। বিশেষ করে রড ও ছোট জলযান নির্মাণশিল্পের কাঁচামালের অন্যতম উৎস জাহাজভাঙা কারখানা। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকায় এই দুটি শিল্পের সক্ষমতা বাড়ছে। দেশের হালকা প্রকৌশল খাতের অনেক সরঞ্জাম সরবরাহ হচ্ছে জাহাজভাঙা খাত থেকে। এ কারণে জাহাজভাঙা শিল্পেরও প্রসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। শিল্পকারখানায় কাঁচামালের জোগান ছাড়াও পুরোনো পণ্যের বাণিজ্যের আকার কম নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দেড় হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান পুরোনো জাহাজের পণ্য বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আবার তামা, পিতল, মরিচারোধী ইস্পাত রপ্তানি হচ্ছে। এই খাতে এখন সরাসরি ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হিসাব করা হলে তা কয়েক লাখ হবে।