ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা বা জিএসপি অক্ষত রয়েছে। তবে এ দেশের পোশাকশিল্পের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ নজর রাখছে ইইউ। ইইউ প্রত্যাশা করে, এই সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন দলের প্রধান উইলিয়াম হান্না এসব কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পাশাপাশি এ শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নত, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জিএসপি-সুবিধার সদ্ব্যবহার করবে।
সাভারে রানা প্লাজা ধসে আহত ও নিহত পোশাকশ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও জাতীয় এক সংলাপ অনুষ্ঠানে উইলিয়াম হান্না এসব কথা বলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই আয়োজনের সহযোগী ছিল অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই সমিতি (ডিইউইডিএএ)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে গতকাল সকালে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
পিপিআরসির নির্বাহী সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংলাপে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের প্রধান ফারাহ কবীর, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এ তসলিম, ডিইউইডিএএর সহসভাপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক, শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ প্রমুখ।
সংলাপে রায় রমেশ বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজির ভিত্তিতে হিসাব করা হলে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ১২০ ডলারের কমে নিম্নতম মজুরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের অন্যান্য যেসব পন্থা রয়েছে, সেগুলোকে হিসাবে ধরলে এই মজুরি আরও বাড়বে।
এ সময় তিনি বলেন, মালিকেরা এমন একটি নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব করেছেন, যেটি দেখে মনে হচ্ছে, যেন তাঁরা কাউকে ভিক্ষা দিতে চাচ্ছেন।
রায় রমেশ মজুরি বোর্ডের সদস্যদের বিদেশ সফরকে অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে বলেন, এটি সময়ক্ষেপণেরও কৌশল হতে পারে। তিনি বলেন, যদি শ্রমিকের সংগঠন করার অধিকার, নিম্নতম মজুরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে আমেরিকার মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি-সুবিধাও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের যদি কোনো মন্ত্রী বা নেতা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন, তাহলে এ শিল্পের সমস্যার সমাধান হবে না।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী শ্রমিকের স্বাস্থ্যবিমার দাবি জানান। তিনি বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যে রেশনিং সুবিধা দেওয়া হয়, পোশাকশ্রমিকদের জন্যও একইভাবে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এসব পরিবারকে অর্থ ও প্রয়োজনীয় সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নিহত ও আহত মিলিয়ে এক হাজার ১৬৮ জন শ্রমিকের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে পিপিআরসি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের ১৬টি পরিবারকে অর্থসহায়তা ও চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই শিল্পোদ্যোক্তা তাৎক্ষণিকভাবে দুই শ্রমিককে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। এ ছাড়া ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।