সঠিক নীতি সহায়তার অভাবে মোবাইল ব্যাংকিং এগোচ্ছে না
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১০ সালে প্রান্তিক মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে শুরু করে। এর ধারাবিহকতায় বর্তমানে দেশে ১৬টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান ১০ কোটির বেশি মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। কিন্তু সেবাপদ্ধতি সহজ না হওয়ায় অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও খাতটি এগোচ্ছে না বলে কথা উঠেছে।
অন্যদিকে সঠিক নীতি সহায়তার অভাবে লোকসান করছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে সরকারি সহায়তা পেলে দেশের শতভাগ মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবার আওতায় আনার সম্ভাবনা আছে।
‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও চর্চা’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এমনটাই বলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষকেরা। পিআরআই ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটির আয়োজন করে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই কর্মসূচিতে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভী। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, গবেষণা পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ও পরিচালক বজলুল এইচ খন্দকার।
‘বাংলাদেশের উন্নয়নে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ কতটা জরুরি, তা আমরা করোনাকালে উপলব্ধি করেছি। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে চেয়ে তা পুরোপুরি পারেননি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি না থাকার কারণে। সরকারি তথ্যভান্ডারের দুর্বলতার কারণে মানুষকে এই সেবার মধ্যে আনা যায়নি।’
দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার প্রসার ঘটলেও তাতে নীতি সহায়তার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিকাশের মাধ্যমে আমরা এখন টাকা পাঠানো, কেনাকাটা, হাসপাতালের বিল, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ সরকারি সব পরিষেবার বিল ও বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছি। তবে বিকাশের মতো আর কেউ পারছে না। নগদ কিছুটা করলেও এখনো তাকে লাইসেন্স দেওয়া যায়নি। মানুষ বিশ্বাসহীনতায় ভুগছে।’ তিনি আরও বলেন, বিকাশ সিটি ব্যাংকের সহায়তায় ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার উচ্চহারের ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, সরকার ব্যক্তি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাড় করে। এসব অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হলে বহু লোক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আসতেন। এতে একদিকে স্বচ্ছতা আসত, অন্যদিকে সব মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছাত।
পিআরআইয়ের আরেক গবেষক আবদুর রাজ্জাক তাঁর প্রবন্ধে বলেন, সরকার বাজেটের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেন। এই অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে বিতরণ হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে বৈষম্য কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত আইনের আলোকে কাজ করেন। সে কারণে নতুন উদ্ভাবন খুব কম হয়। তবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সহজতর করছি।’
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে থাকার পেছনে মানুষের মানসিকতাও দায়ী বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন। সেটি অনেক দেশে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।’