সব সঞ্চয় কর্মসূচি সবার জন্য নয়

বেশি ঝুঁকি নিয়ে বেশি লাভের আশা যাঁরা করেন না, তাঁরা ছাড়া সবাই চান ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ। আর এ ধরনের বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। আগে অনেক সঞ্চয়পত্র থাকলেও এখন শুধু চার ধরনের সঞ্চয়পত্র প্রচলিত। এগুলো হচ্ছে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়া রয়েছে দুই ধরনের ডাকঘর সঞ্চয় হিসাব, ডাক জীবনবিমা ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড। কিন্তু সবাই এগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারেন না। কারা, কোন ধরনের কর্মসূচিতে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন, এবারের আয়োজন তা নিয়ে। গ্রাহক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।

৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
এই কর্মসূচি চালু হয় ১৯৭৭ সালে। বিভিন্ন সময়ে এর মুনাফার হার পরিবর্তন হলেও বর্তমানে মেয়াদান্তে মুনাফা ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকই এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ ও যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকার এ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই।

৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
এটি ১৯৯৮ সালে চালু হয়। দেশের যেকোনো একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এবং যুগ্ম নামে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। ৩ বছর মেয়াদি এ সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ।

পরিবার সঞ্চয়পত্র
মাঝখানে বন্ধ থাকলেও এই সঞ্চয়পত্র নতুন করে চালু করা হয় ২০০৯ সালে। এ সঞ্চয়পত্রে টাকা বিনিয়োগ করা যায় ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি যেকোনো নারী, বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী যেকোনো পুরুষ ও নারী এবং ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী। এই সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। মুনাফার হার ৫-বছরের মেয়াদান্তে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগে ভাঙালে মুনাফার হার কম।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র
এটি চালু হয় ২০০৪ সালে। মেয়াদ ৫ বছরের। এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী-স্ত্রী-সন্তানেরা।
আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায় এ সঞ্চয়পত্রে। মুনাফার হার মেয়াদান্তে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক
এটি ১৮৭২ সালে চালু হয়। এর দুটি ভাগ রয়েছে—সাধারণ হিসাব ও মেয়াদি হিসাব। সাধারণ হিসাবে মুনাফা পাওয়া যায় সরল হারে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মেয়াদি হিসাবে (৩ বছর) মুনাফা মেয়াদান্তে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক দুই হিসাবেই টাকা রাখতে পারেন। উভয় হিসাবেই বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা একক নামে সর্বোচ্চ ১০ লাখ এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ১৮ মে থেকে এ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তার আগে ঊর্ধ্বসীমা একক নামে ৩০ লাখ ও যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা ছিল।

ডাক জীবনবিমা
এটি চালু হয় ১৮৭২ সালে। ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক এ বিমা পলিসি করতে পারেন। পলিসির ধরন হচ্ছে জীবন চুক্তি বিমা, মেয়াদি বিমা, শিক্ষা মেয়াদি বিমা, বিবাহ বিমা এবং এন্ডোমেন্ট বিমা। ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই এসব পলিসি করা যায়। প্রিমিয়ামের হার কম থাকলেও ডাক জীবনবিমা থেকে বোনাসের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাওয়া যায় আয়কর রেয়াত এবং ১০০ শতাংশ ঝুঁকির নিরাপত্তা।

ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড
৫-বছর মেয়াদি এই বন্ড চালু হয় ১৯৮১ সালে। মেয়াদান্তে মুনাফা ১২ শতাংশ। বন্ড ধারক ১২ শতাংশ হারে প্রতিবছর ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কোনো ওয়েজ আর্নার নিজ নামে অথবা আবেদনপত্রে উল্লিখিত তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামে অথবা প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার সুবিধাভোগী ব্যক্তির নামে এ বন্ড কিনতে পারেন।

বিদেশে লিয়েনে কর্মরত বাংলাদেশি সরকারি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীরাও এ বন্ড কিনতে পারেন।