সময়মতো হস্তান্তরে ও মান নিয়ে কখনো আপস করিনি

২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে আবাসন প্রতিষ্ঠান ক্রিডেন্স হাউজিং। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ১৩টি প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের আগে ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এবারের আবাসন মেলায় ক্রিডেন্স নিয়ে আসছে ৩৭টি প্রকল্প। মেলা শুরুর আগে আবাসন খাতের বিভিন্ন বিষয় ও ক্রিডেন্সের সফলতা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুল করিম।

প্রথম আলো: এবারের আবাসন মেলায় আপনারা কতটি প্রকল্প নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারে এত প্রতিষ্ঠান থাকতে মানুষ কেন আপনাদের ফ্ল্যাট কিনবে?
জিল্লুল করিম: এবারের মেলায় ক্রিডেন্স হাউজিং ৩৭টি নতুন প্রকল্প নিয়ে হাজির হবে। এর মধ্যে ৩৩টি প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রি করা হবে। বাকি চারটি প্রকল্প শুধু প্রদর্শন করা হবে। আমাদের প্রকল্পগুলোর লোকেশন ঢাকার ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, বনানী, সিদ্ধেশ্বরী ও বাড্ডা এলাকায়। ২০১৬ সালে ক্রিডেন্স হাউজিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। এরপর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এটি ক্রেতাদের কাছে বেশ বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কারণ, আমরা ক্রেতাদের সঙ্গে যেসব ওয়াদা করেছি, সেগুলো এখন পর্যন্ত শতভাগ পূরণ করেছি। সময়মতো ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও মানের বিষয়ে আমরা কোনো আপস করিনি। এখন পর্যন্ত আমরা ১৩টি প্রকল্প হস্তান্তর করেছি। নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব প্রকল্পের ফ্ল্যাটের চাবি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়েছি। ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমরা কোনো আপস করিনি। আবার আমাদের সব প্রকল্প এমনভাবে নকশা করা, যেখানে আলো-বাতাসের কোনো ঘাটতি থাকে না। নকশায়ও আমাদের প্রকল্পগুলো অন্যদের চেয়ে আলাদা ধরনের। এ কারণে কম সময়ের মধ্যে আমাদের প্রতি ক্রেতাদের ব্যাপক আস্থা তৈরি হয়েছে। আবাসন ব্যবসাটি মূলত আস্থার ব্যবসা। আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রেতাদের অনেক আস্থা রয়েছে। তাই আমরা ক্রেতাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

প্রথম আলো: বর্তমানে আবাসন খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী?
জিল্লুল করিম: আবাসন খাতের জন্য সব সময়ই বড় সমস্যা জমির সংকট। দিন যত যাচ্ছে, জমির সংকট তত প্রকট হচ্ছে। সঠিক জায়গায় সঠিক দামে জমি পাওয়া এ খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। জমির দামের কারণেই ফ্ল্যাটের দামেও বড় ধরনের হেরফের হয়। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিও সময়ে সময়ে এ খাতে সংকট তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীরই দাম বেড়েছে। তাতে বছরখানেকের ব্যবধানে ফ্ল্যাটের দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম যদি আরও বাড়ে, তাহলে ফ্ল্যাটের দামও বাড়বে।

প্রথম আলো: সবাই মিলে শুধু ঢাকায় ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট বানাচ্ছেন। তাতে জমির দাম তো বাড়বেই। ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন না কেন?
জিল্লুল করিম: সবাই জানতে চান, আমরা আবাসন ব্যবসাকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাচ্ছি না কেন? আমি বলব, আমরা ব্যবসায়ী। গ্রামেগঞ্জে বা ঢাকার বাইরে যেখানেই ব্যবসার সুবিধা দেখব, আমরা সেখানেই যাব। হাতে গোনা কয়েকটি শহর ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো চাহিদা তৈরি হয়নি। তাহলে যেখানে ব্যবসা হবে না, সেখানে আমরা কেন যাব? আপনি যদি খোঁজ নেন তাহলে জানবেন, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে সামর্থ্যবান মানুষ প্রতিনিয়ত ঢাকায় চলে আসছেন। কারণ, ঢাকার তুলনায় সেসব জায়গায় সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। আমার অভিজ্ঞতায় এমনও দেখেছি, চট্টগ্রামে নিজের বিশাল বাড়ি রেখে সন্তানের পড়াশোনার প্রয়োজনে অনেকে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে থাকছেন। এই যখন অবস্থা, তখন বড় শহরের বাইরে এ ব্যবসাকে নিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা কতখানি, সেটি গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবাসন ব্যবসাকে নিয়ে যেতে হলে সবার আগে সব জায়গায় সমান নাগরিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা দরকার।

প্রথম আলো: গ্রামগঞ্জে তো এখন নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। যোগাযোগব্যবস্থারও অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরও কেন এ সমস্যা?
জিল্লুল করিম: গ্রামগঞ্জের অনেক উন্নতি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন। এর প্রধান কারণ হলো, সেসব জায়গায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থার অভাব রয়েছে। তাই যত দিন বড় শহরগুলোতে মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না, তত দিন মানুষ ঢাকামুখী হবেন। আর তাতে ঢাকায় জমির চাহিদা বাড়বে। সেই সঙ্গে ফ্ল্যাটের দামও বাড়তে থাকবে।

প্রথম আলো: সম্প্রতি রাজউক ঢাকায় নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আবাসন খাত সংকটে পড়বে। ফ্ল্যাটের দামও অনেক বেড়ে যাবে। আপনি কী মনে করেন?
জিল্লুল করিম: নতুন ড্যাপের বিষয়ে আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে যতটুকু শুনেছি, তাতে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না। সেটি হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। আমাদের জনবসতির এখন যে অবস্থা, তাতে ভার্টিক্যাল শহর গড়তে হবে। সুউচ্চ ভবন তৈরি করতে হবে। সিঙ্গাপুর যেভাবে করেছে। যদি আমরা কম উচ্চতার ভবনের দিকে যাই, তাহলে দেখা যাবে অনেক আবাদি জমি নষ্ট হবে। সে ক্ষেত্রে অন্য জায়গায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শুধু ঢাকাকে চিন্তা করে কোনো কিছু করা ঠিক হবে না। বড় বিভাগীয় শহরগুলোকেও বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। আমি মনে করি, যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সেটি চূড়ান্ত করা ভালো। তাহলে কোনো খাত সমস্যায় পড়বে না।

প্রথম আলো: বর্তমানে গ্রাহকদের মধ্যে কী ধরনের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি? আর আবাসন ব্যবসার সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
জিল্লুল করিম: বর্তমানে ক্রেতাদের মধ্যে এক হাজার থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেই ফ্ল্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ভবিষ্যতে আবাসন খাতের ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নিজের একটা ঠিকানা হবে, এই স্বপ্ন দেখেন মানুষ। যদি ঢাকা শহরের অবস্থাই বলি, প্রায় দুই কোটি লোকের বাস এ শহরে। আমাদের হিসাবে এর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ লোকের নিজের ফ্ল্যাট বা বাড়ি রয়েছে। বাকি ৮৫ শতাংশ লোকের কাছে ফ্ল্যাট বা বাড়ির স্বপ্ন এখনো অধরা। এই ৮৫ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশও যদি ফ্ল্যাট কেনেন, তাহলে প্রায় এক লাখ ফ্ল্যাটের চাহিদা তৈরি হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দেখা যাবে গ্রামেগঞ্জের মানুষও তাঁদের নিজের বাড়িটাকে একটু আধুনিক করতে চাইবেন। আমরা হয়তো তখন গ্রামেগঞ্জে গিয়ে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি করে দেব। সেটি হলে আবাসন ব্যবসায়ে নতুন মাত্রা যোগ হবে। তাই আমি আগামী দিনগুলোতে আবাসন ব্যবসার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখি।