সিপিডির পর এবার টিআইবির সমালোচনা করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী

দুই দিন আগে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণার সমালোচনা করে এবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশেরও (টিআইবি) সমালোচনা করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
উভয় সংস্থাকে উদ্দেশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তারা এনজিও, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত এবং বাংলাদেশের পক্ষে আজ পর্যন্ত একটাও ইতিবাচক কথা বলেনি। তাদের মূল্যায়নের ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সফররত জার্মানির শ্রম ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইয়গ আসমুসেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) তৈরি দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে কেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এর জবাব দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারপর মন্ত্রী নিজেই পাল্টা কয়েকটি প্রশ্ন করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
তোফায়েল বলেন, ‘একটা মানুষ কি শুধু ভালোই হয়? খারাপ কি হয় না? একটা গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ থাকলে আমরা কি সব সময়ই বলব যে, অর্ধেক খালি? আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে একটাও ইতিবাচক কথা কি তাদের কাছ থেকে শোনা গেছে? তাদের মূল্যায়নের ভিত্তি কী?’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলো হচ্ছে এনজিও এবং বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত। এটা ঠিক দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে। পরিবর্তন তো হয়ই। দুর্নীতিহীনতার দিক থেকে গতবার যারা প্রথম-দ্বিতীয় ছিল, তারাও তো আগের জায়গায় নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কালকে ইঙ্গিত করে তোফায়েল বলেন, ‘এক সময় দুর্নীতিতে আমরা চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। এখন সেটা নেই। এ বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের অবস্থান এখন কাছাকাছি।’
টিআইয়ের প্রতিবেদনে প্রভাবশালীদের দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে—এমন বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় এসেছে ১৬ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে কর দেন ছয় লাখ। ১৬ লাখের মধ্যে কয়েক লাখ আছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। তাঁরা কর দেন কি না, জানতে চান বাণিজ্যমন্ত্রী।
তোফায়েল বলেন, ‘এটা ঠিক যে রাজনীতিবিদদের স্বচ্ছ থাকতে হবে, কিন্তু সংবাদপত্রের মালিক-সম্পাদকদের স্বচ্ছ না থাকলেও চলবে। কারণ, তাঁরা তো জনপ্রতিনিধি নন।’
দেবপ্রিয়কে উদ্দেশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উনারা বেশি লেখাপড়া জানেন। বড় বড় অর্থনীতিবিদ। রাশিয়া থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কি কোনো উন্নতিই হয়নি? সিপিডি নিয়ে আমি সেদিন ঠিক মন্তব্যই করেছি। এ মন্তব্যের জন্য অনেকের প্রশংসাও পেয়েছি।’
গত ২৮ নভেম্বর আঙ্কটাড-সিপিডি নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে প্রতিবেদনের খারাপ অংশ লিখেছে, ভালো অংশ লেখেনি। লিখবেও না। কারণ, ভালো লিখলে মানুষ পড়ে না।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
গণমাধ্যম প্রসঙ্গ: সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনেক লাইসেন্স দিয়েছে এবং এদের কাজের গুণগত মান ততটা ভালো নয়—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা রসিকতা করে তোফায়েল বলেন, ‘বেশি করে দেওয়া হচ্ছে যাতে আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে বেশি বলতে পারেন।’
তথ্যমন্ত্রী যে বলে থাকেন ব্যবসার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে—এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা কোথায় নেই? আমরা লাইসেন্স দিই, তা আবার বিক্রিও করে দেয় কেউ কেউ।’
নীতিনির্ধারকদের দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষের দুর্নীতি এক নয়—সাংবাদিকেরা এমন প্রসঙ্গ তুললে তোফায়েল বলেন, ‘আমার মূল্যায়ন করলে বোঝা যাবে ১৯৭২ সালে আমার কী সম্পদ ছিল, এখন কী হয়েছে বা কতটা বেড়েছে। তবে শুধু রাজনীবিদদের সম্পদই কি বেড়েছে? সংবাদপত্রের মালিক-সম্পাদক ও তাঁদের সন্তানদের কোনো সম্পদ বাড়েনি? ভালো-খারাপ তো সবার মধ্যেই আছে। আর আপনারা যদি টাকার সঙ্গে টাকা মেলান, তাহলে হবে না। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ১৯৭৪ সালে এক ডলার সমান ছিল ৪ টাকা ৮৪ পয়সা, এখন এক ডলার সমান ৮০ টাকা।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা লিখেন, আমরা চুপচাপ থাকি। কারণ, আমরা তো আর প্রতিদিন লিখতে পারব না। দেশে এতগুলো পত্রিকা থাকা প্রসঙ্গে তোফায়েল বলেন, একটা নিয়ম করা হয়েছিল যে এক টন নিউজপ্রিন্ট দেশ থেকে কিনলে আরেক টন আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু গত তত্ত্বাবধায়কের সময় সম্পাদক সাহেবরা মঈন উ আহমেদের কাছে গিয়ে বললেন, তৎকালীন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নির্দিষ্ট কোম্পানিকে সুবিধা দিতে এটা করেছিলেন। এরপর আবার আগের অবস্থা ফিরে এল।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ১০০ হলে দেখানো হয় ৫০ হাজার, ৫০ হলে দেখানো হয় ২৫ হাজার। বাড়তি কাগজ তাঁরা নয়াবাজারে বিক্রি করে দেন। এর ফলে দেশীয় নিউজপ্রিন্ট কলগুলো মার খাচ্ছে। যাঁদের পত্রিকা আছে, আবার কাগজ উৎপাদনের কারখানাও আছে, তাঁরা এখন আমার কাছে ঘুরেন, এটা কীভাবে বন্ধ করা যায়।’