সিম নিবন্ধন মার্চের মধ্যে অন্যথায় জরিমানা

মোবাইল সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সিম নিবন্ধনের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, মোবাইল অপারেটরদের আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এ কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে। সেটা না করতে পারলে এপ্রিল থেকে প্রতিটি অনিবন্ধিত সিমের জন্য জরিমানা করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ৯০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আজ সচিবালয়ে আসছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। গত ৩০ জুলাই প্রথম এ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন তিনি।
সিম নিবন্ধন সম্পর্কে তারানা হালিম বলেন, সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ পদ্ধতি নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এগিয়ে এনে আগামীকাল (আজ) থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন সাতটি প্রতিষ্ঠানের গত তিন মাসের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ সাতটি প্রতিষ্ঠান হলো—বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), ডাক বিভাগ, টেলিটক, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল), টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ও কেব্ল শিল্প লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়, এ তিন মাসে লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল বিএসসিসিএল। প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ের জন্য যেসব লক্ষ্য ঠিক করেছে তার ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। বিএসসিসিএলের নির্ধারিত পাঁচটি লক্ষ্যের অন্যতম ছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ব্যান্ডউইট্থ রপ্তানি শুরু করা।
ভারতে ব্যান্ডউইট্থ রপ্তানির বিষয়ে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হলেও ভারত অংশের কাজ এখনো বাকি আছে। তারা পূজার পর বাকি কাজ শুরু হবে বলে তারা জানিয়েছে। আগামী নভেম্বরে রপ্তানি শুরু করা যাবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে গত ৬ জুন ব্যান্ডউইট্থ রপ্তানিতে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) ও বিএসসিসিএলের মধ্যে এ চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ১০ জিবিপিএস (গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড) ব্যান্ডউইট্থের জন্য বছরে ১২ লাখ মার্কিন ডলার পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
ল্যাপটপ, টেলিফোন সেট, মোবাইল চার্জার ও ব্যাটারি উৎপাদন এবং বিপণনে গত তিন মাসে ১০০ শতাংশের বেশি লক্ষ্য অর্জন করেছে টেশিস। বাংলাদেশ কেব্ল শিল্প লিমিটেডও এ সময়ে অপটিক্যাল ফাইবার ও কপারের তার উৎপাদনে ১১৩ থেকে ১২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের কার্যক্রম সম্পর্কে তারানা হালিম বলেন, ‘বিনিয়োগ কম হওয়ায় টেলিটক এখনো হামাগুড়ি দিয়ে চলছে। আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।’ গত তিন মাসে ৬ লাখ ৮০ হাজার নতুন গ্রাহক যোগ করার পরিকল্পনার বিপরীতে পাঁচ লাখ সিম বিতরণ করতে পেরেছে টেলিটক।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসি গত তিন মাসে ৭৯০ কোটি টাকার বকেয়া আদায় করেছে। স্বল্পমেয়াদি কিছু লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য পেলেও ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক (আইএই) চালু করার মতো বড় কাজে তেমন কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি বিটিসিএল।
নিজের ৯০ দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে তারানা হালিম বলেন, ‘পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ করতে পারে। গত ৯০ দিনে আমি সেই চেষ্টাটাই করেছি।’ সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।