৩০টি বাজেট দিয়েছেন সিলেটের অর্থমন্ত্রীরা, তবু সেখানে নিরক্ষর ৪৯%: আবুল বারকাত

টানা ২৮ বছরসহ দেশের মোট ৪৮টি জাতীয় বাজেটের মধ্যে ৩০টি পেশ করেছেন সিলেট অঞ্চলের তিনজন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রাচুর্য থাকলেও কৃষি খাতের মাধ্যমে এই বিভাগের গ্রামীণ পরিবারের বার্ষিক আয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম, ৬৩ হাজার ৪২১ টাকা। এই বিভাগের কৃষিযোগ্য জমির ৫৫ শতাংশই অনাবাদি পড়ে থাকে।

শুধু তা–ই নয়, সিলেট বিভাগের ৪৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু প্রসবের হার মাত্র ৩৮ শতাংশ। জন্মের সময় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা বলেন সভাপতি আবুল বারকাত। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলাম বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সিলেট বিভাগের মানুষের যতটুকুই উন্নয়ন হয়েছে, তা সম্পূর্ণই প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে। বাজেট প্রণয়নে কালোটাকা ও অর্থ পাচার বন্ধ করে সৎ কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগবান্ধব কর্মকৌশল, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা ও সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হলে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন অনেক আগেই হতো।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া মুক্তবাজার দর্শনের কারণে জাতীয় বাজেট এখন সম্পদ দখলকারী, দুর্বৃত্ত, পরজীবী শ্রেণি, অনুপার্জিত আয়কারী, লুটেরা, আত্মসাৎকারী, ফাউ খাওয়া শ্রেণি, মহা দুর্নীতিবাজ ও ফাটকাবাজ গোষ্ঠীর তোষণ-পোষণকারীতে পরিণত হয়েছে। আর তাই আঞ্চলিক বৈষম্যের অবসান হয় না। তাঁরা বলেন, ঘাটতি, অস্বচ্ছতা ও গোঁজামিল দিয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য প্রণীত জাতীয় বাজেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় না।

আলোচনায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক নেতাসহ নানা শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে বিকল্প বাজেটে অন্তর্ভুক্তির তাঁদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল বারকাত বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি এখন ‘রেন্ট-সিকার’ গোষ্ঠীর দাসে পরিণত হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে আবারও বৈষম্যমূলক দ্বৈত-অর্থনীতি পাকাপোক্ত রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, জাতীয় নীতি ও বাজেট প্রণয়ণকারীদের চিন্তা ও স্বদেশপ্রেমের দীনতা।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারাসহ অধ্যাপক সৈয়দ আশরাফুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, মো. মাহবুবুল হাকিম, মুহাম্মদ আবু তাহের, অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন প্রমুখ যোগ দেন।