৫০-৫৩ লাখ টাকায় বিক্রি হলো বিএমডব্লিউ

পর্যটক হিসেবে শুল্ক সুবিধায় আনা গাড়ি নিলামে বিক্রি করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিক্রি হওয়া তিনটি গাড়ির চাবি ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়
ছবি : জুয়েল শীল

পর্যটকদের ফেলে যাওয়া বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়ি নিলামে বিক্রির জট খুলেছে। প্রথমবারের মতো তিনটি গাড়ি নিলামে বিক্রি করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আজ বুধবার এই তিন গাড়ি সর্বোচ্চ দরদাতাদের হাতে তুলে দেন কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম।

গত বছরের ৩ ও ৪ নভেম্বর ৩টিসহ মোট ১১২টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। বিক্রি না হওয়া ১০৯টি গাড়ি আবার নিলামে তুলবে কাস্টমস। আজ ক্রেতাদের হাতে প্রতীকী চাবি তুলে দিয়ে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের তদারকির কারণে শেষ পর্যন্ত পর্যটক সুবিধায় আনা গাড়ি নিলামে বিক্রির জট খুলেছে। সামনে নিলামে যৌক্তিক মূল্য পেলেই গাড়ি বিক্রি হবে। এতে যেমন সরকারের রাজস্ব আদায় হবে, তেমনি বন্দরে জায়গাও খালি হবে।

এই তিন গাড়ির একটি বিএমডব্লিউ কার। ২০০৬ সালে জার্মানিতে তৈরি গাড়িটি ২ হাজার ৪৯৭ সিসির (সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি)। মোট ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দর দিয়ে গাড়িটির সর্বোচ্চ দরদাতা হয় সাইফ অটো মোবাইলস। অগ্রিম আয়কর, মূসকসহ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হচ্ছে ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সাইফ অটো মোবাইলসের কর্ণধার সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১টি গাড়িতে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছি। শেষ পর্যন্ত একটি হলেও পেয়েছি।’ গাড়িটি নিজের ব্যবহারের জন্য কিনেছেন বলে তিনি জানান। এই ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের গাড়ির দাম ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বলে জানান এই গাড়ি ব্যবসায়ী।

বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ি পেয়েছে ফারজানা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফারজানা ট্রেডিং। ৫৩ লাখ টাকায় গাড়িটি পায় প্রতিষ্ঠানটি। মূল্য সংযোজন কর, অগ্রিম আয়করসহ তাদের খরচ হচ্ছে ৬২ লাখ টাকা। জার্মানির তৈরি ২০০৬ সালের গাড়িটি ৩ হাজার সিসির। ফারজানা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক কারখানার বিদেশি ক্রেতাদের বহনের জন্যই গাড়িটি কিনেছি।’

টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ি পেয়েছে খুলনার সুপার জুট মিলস লিমিটেড। প্রায় ৪১ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গাড়িটি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২ হাজার ৯৮২ সিসির গাড়িটি ২০০৪ সালে জাপানে তৈরি হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ায় পর্যটক সুবিধায় আনা গাড়ি বিক্রিতে আর কোনো বাধা নেই। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিধির নাম পাঠানোর পরই অবিক্রীত গাড়ি আবারও বিশেষ নিলামে তোলা হবে।

পর্যটক হিসেবে শুল্ক সুবিধায় আনা গাড়ি নিলামে বিক্রি করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিক্রি হওয়া তিনটি গাড়ির চাবি ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়
ছবি : জুয়েল শীল

পর্যটনসুবিধায় এক দশক আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পর্যটকেরা। সাধারণত পর্যটনসুবিধায় গাড়ি আনলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, তবে তা আবার ফেরত নেওয়ার শর্তও থাকে। অতীতে এ সুবিধায় আনা অনেক গাড়ি ফেরত নেওয়া হয়নি। সে জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার রোধে ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাসের শর্ত আরোপ করে কাস্টমস। তখন খালাস না নিয়ে সটকে পড়েন পর্যটকেরা। এরপর চার দফায় নিলামে তোলা হলে কিছু গাড়ির ভালো দাম পেলেও বিক্রি করেনি কাস্টমস। বেশির ভাগ গাড়ি খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না থাকায় সে সময় বিক্রি করা যায়নি। ছাড়পত্র পাওয়ায় এখন আর সমস্যা নেই।