
‘৮-১০ দিন আগেও একটা ফুলকপি বেচতাম ২০ টাকায়। এখন বেচতাছি ৪০ টাকায়। দাম বেশি নিতাছি ক্যা, এইডা লইয়া কাস্টমারগো লগে খালি ক্যাচাল লাগে।’
কথাগুলো রামপুরা কাঁচাবাজারের সবজিবিক্রেতা সালামতের। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাজারেই তার সঙ্গে কথা হয়।
জানতে চাই, বেশি দামে বিক্রি করছেন কেন? সালামতের উত্তর, ‘ঢাকায় মালের আমদানি কম। আমাগো কাছে আড়তদারেরা বেশি দামে সবজি বিক্রি করতাছে। আমরাও কাস্টমারগো কাছ থিকা বেশি দাম রাখতাছি। কী করমু কন?’
বছরের এই সময়টায় শীতকালীন সবজিতে বাজারভর্তি হয়ে যায়। সে কারণে খুবই কম দামে সবজি বিক্রি হয়। আর তাই ক্রেতারাও ইচ্ছেমতো সবজি কিনে আয়েশ করে খান। এ বছরও সে রকমই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু দুই দফায় টানা অবরোধ কাঁচাবাজারের সে চিত্র পাল্টে দিয়েছে। সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
এই ভরা মৌসুমেও সবজির দাম এত বেশি হবে কেন—এ নিয়েই ক্রেতাদের ক্ষোভ। কিন্তু এ দাম বৃদ্ধির ভিন্ন একটি দিকও যে আছে, তা সালামতের কথাতেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সালামতের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন সবজি বিক্রি বন্ধ রেখে পাশের দোকানের বিক্রেতা আবদুল্লাহ আর ছগিরও এসে কথায় যোগ দেন। আবদুল্লাহর বক্তব্য, ‘আমরা বেশি দাম রাখলেই দোষ। আমাগো যে বেশি দাম দিয়া সবজি কিন্না আনতে হইতাছে এইডা কেউ দেখে না।’
এর সঙ্গে যোগ করে ছগির বলেন, ‘আপনেরাও তো খালি আমাগো দোষটাই লেখেন। অনেক সময় কাস্টমাররা আমাগো গায়ে হাতও তোলে সেইটা দেখেনও না, লেখেনও না।’
বেলা আড়াইটার দিকে কথা হয় সবজিবিক্রেতা সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তার দোকানে সবজি কম দেখা গেল। বরং ঝুড়িভর্তি লাউশাক, পালংশাক আর মুলাশাক রয়েছে।
সবজি কম কেন—জানতে চাইলে সাইদুলের জবাব, ‘গাড়ি তো দেশের থিকা আইতে পারতাছে না। সবজিও আইতে পারতাছে না। হেল্লেগাই সবজি কম।’ তাইলে এত শাক পাইলেন কই—এ প্রশ্নে জবাব আসে, ‘এসব শাক আইছে বছিলা থেকে। এই দিক দিয়া প্রচুর শাক আইতাছে। দেখেন সব দোকানেই শাক বেশি।’
এই বাজারের সামনেই গতকাল সকাল ১০টার দিকে মিছিল বের করেন অবরোধকারীরা। এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আসে। অবরোধকারীদের না পেয়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বাজারেরই ২৫ থেকে ২৬ জন সবজি, মুরগি ও মাছবিক্রেতাকে। অবশ্য দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও ওই ঘটনার কারণেই হাতিরপুল বাজারের পণ্য বিক্রিতে ভাটা পড়ে।
মুরগিবিক্রেতা ইউছুফ আলীর ছোট ভাইকেও দোকান থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি জানান, এমন সময় প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি মুরগি বিক্রি হয় তাঁর। কিন্তু গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২টি।
পুলিশের ধরপাকড় শুরু হলে আরেক মুরগিবিক্রেতা নবীর হোসেন দোকান বন্ধ করে সরে পড়েন। ঘণ্টা খানেক পর এসে আবার দোকান খোলেন। সে কারণে গতকালের বিক্রি খুবই কম।