করোনা মহামারি রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। খাবারের মানও কমেছে। বিশেষ করে ফাস্ট ফুড বা কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ ব্যবসা একেবারে বসে গেছে। এসব দিক বিবেচনা করে এবারের বাজেট ছিল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, বাজেটে সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য দিকনির্দেশনা থাকবে। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। বাজেটে কফি ও পনিরের দাম বাড়ার কথা বলা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে এখন গ্রাহক ও মালিকদের বাড়তি খরচ গুনতে হবে।
সয়াবিন তেল থেকে শুরু করে খাবারের বিভিন্ন উপকরণের দামও এখন নাগালছাড়া। সয়াবিন তেলের লিটার ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাছ, মাংস, সবজি—সবকিছুর দামই বেশি। বেড়েছে চাল, ডাল আর মসলার দামও। এসব কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ খাতের ব্যবসায়। বাধ্য হয়ে খাবারের দাম বাড়াতে হচ্ছে। অনেকে দামের সঙ্গে মানের সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না। আবার খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমেছে। ফলে চারদিক থেকে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা চাপে রয়েছেন। এবারের বাজেটে দরকার ছিল ব্যবসা বাঁচানোর সঠিক নির্দেশনা, কিন্তু তা পাওয়া যায়নি।
বাজেটে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বর্তমানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ অর্থ গুনতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব রেস্তোরাঁয় খাওয়ার বিলের ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এতে ব্যবসার গতি কিছুটা হলেও বাড়বে। অন্যদিকে মাছ-মুরগি ও গবাদিপশুর খাবার তৈরির উপকরণে করছাড় দিয়েছে সরকার। এতে এসব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমতে পারে। এ জন্য মাংসের দামও কমার কথা। চিনি ও কাজুবাদামের দামও কমবে। ফলে কিছুটা সুবিধা ঘরে তুলতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে মূল সমস্যা খাবারের দামে। কফি ও পনির রেস্তোরাঁর জন্য নিত্যপণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব পণ্যের দাম না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন।
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও রেস্তোরাঁর ব্যবসা গত এক দশকে প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ৩০০ বড় রেস্তোরাঁ রয়েছে। ছোটখাটো আরও অন্তত ৫০০ রেস্তোরাঁ রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় বছরে। তবে করোনায় এসব রেস্তোরাঁয় ব্যবসা হয়নি। আবার বাড়তি দাম নিয়েও গ্রাহকদের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করে। অনেক সময় খারাপ রিভিউ আসে। দামের সঙ্গে খাবারের মান ধরে রাখতে পারেন না অনেকেই। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হন। এসব বিষয় এড়াতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল।