আমাদের জন্য আশার কথা, প্রস্তাবিত বাজেটটি বিরাট। তবে আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরে বেশ কিছু ঝুঁকি থাকবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। বিশেষ করে প্রথমে ইউরোপে, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে। সেটির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। কিন্তু সেই ধাক্কা মোকাবিলায় বাজেটে কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আমরা চেয়েছিলাম, ইস্পাতের কাঁচামালের ওপর শুল্ক-কর কমানো হোক। সেটি না করে উল্টো বিক্রয় পর্যায়ে প্রতি টন বিলেটের ওপর ২০০ টাকা ও রডে ২০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়ানো হয়েছে। তাতে প্রতি টন রডের দাম ৪০০ টাকা বাড়বে। খুচরা পর্যায়ে যেটুকু ভ্যাট কমানো হয়েছে, তাতে ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না।
দেশের বাইরে থেকে ডলার ফেরত আনার সুযোগটি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এটি ন্যায়সংগত না হলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাহসী পদক্ষেপ। কারণ, যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার আর কোনো উপায়ও তো নেই। তবে এক বছর ধরে সুযোগ দেওয়াটা পছন্দ হয়নি। সর্বোচ্চ তিন-চার মাস সময় দেওয়া উচিত ছিল। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা অর্থ নিয়ে আসার নিয়ে আসবেন। সারা বছরের জন্য সুযোগ দেওয়াটা বোধ হয় কৌশলগতভাবে ভুল হলো। আমার মনে হয় না, এই সুযোগে টাকা ফেরত আসবে। এলে দেশ থেকে যাতে টাকা পাচার না হয়, সেদিকেই আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।
বাজেটে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিয়ে কোনো স্বস্তি নেই। এআইটি সমন্বয়ের বিষয়েও কোনো নির্দেশনা আমরা বাজেটে পেলাম না। অগ্রিম আয়কর সব ধরনের আইনের পরিপন্থী। এটা থেকে গেল মানে আপনি আইনকে পাশ কাটিয়ে গেলেন। এখানে আমি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
সরকারি পর্যায়ে দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে টাকা খরচ হবে, সে জন্য একটি সেল থাকা দরকার। এই জায়গাতে নজর দেওয়া দরকার। ১০ টাকার জিনিস ১০০ টাকা দিয়ে কিনে আনলেন—এমনটি যেন না হয়। বিষয়টি আমি আগেও বিভিন্ন পর্যায়ে উত্থাপন করেছি। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না।
সবশেষে বলব, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া না গেলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমায় ছাড় না দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এটি বিশেষভাবে বিবেচনা করা দরকার।