রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিচালনা ব্যয়। এই অবস্থায় এসব ব্যাংকে আগ্রাসী ব্যাংকিং না করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন ব্যাংকগুলোর সর্বশেষ আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনামূলক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, নির্বাহী পরিচালক ড. নির্মল চন্দ্র ভক্ত, মহাব্যবস্থাপক এস এম রবিউল হাসান ও নয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে সব ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং ঋণগ্রহীতা নির্বাচনে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান এ নিয়ে বলেন, নিয়ম মেনে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ঋণ বিতরণ যেন এককেন্দ্রিক না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা ও যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ করতে বারণ করা হয়েছে। সর্বোপরি ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণভাবে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আগ্রাসী ব্যাংকিং পরিহার, খেলাপি ঋণ কমানো ও চার থেকে পাঁচটি ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন ব্যাংকের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে নুরুল আমিন বলেন, ‘৩০ শতাংশ কৃষিঋণ সরাসরি বিতরণ ও সিএসআর খাতে ১০ শতাংশ অর্থ ব্যয় নতুন ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হয়ে গেছে। এটা কমাতে বলেছি। একটি শাখা শহরে খুললে একটি গ্রামে খোলার পরিবর্তে দুটি শাখা শহরে খুললে একটি শাখা গ্রামে খোলার প্রস্তাব করেছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে নতুন ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৫৫৮ কোটি টাকা, যা ২ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ১৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ১৬৪ কোটি টাকা, যা ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এক বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা ৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা, যা প্রায় সাড়ে তিন গুণ।
ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস বৈদেশিক বাণিজ্যের বিপরীতে পাওয়া কমিশন। বৈদেশিক বাণিজ্যে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই কোনো নতুন ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মাত্র সাড়ে ১১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বড় কোনো ব্যাংক করেসপনডেন্ট ব্যাংকিংয়ে রাজি না হওয়ায় আমদানি, রপ্তানি বা অন্য বৈদেশিক বাণিজ্যও হচ্ছে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফারমার্স ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ২৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে। ব্যাংকটির ৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ এখন খেলাপি।
মেঘনা ব্যাংক খেলাপির দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৫৭ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ ছাড়া এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ দশমিক ২৭ শতাংশ বা ২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৭ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং এনআরবি গ্লোবালের খেলাপি ঋণ ৩৩ কোটি ১২ লাখ বা ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।