তিন কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে

চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে এডিবি। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৯ শতাংশ।

এডিবি

তিন কারণে দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এগুলো হলো স্থানীয় বাজারে কেরোসিন, ডিজেলসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং কোভিডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা দেওয়া। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও বিশ্বের দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে থাকবে বলে মনে করছে এডিবি। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বহুজাতিক এ দাতা সংস্থা গতকাল বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২২ প্রকাশ করেছে। সেখানে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জকে সামনে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের আশপাশেই আছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে চাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ জন্য নিম্ন আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিক্রি করছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল এডিবির ঢাকা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যাঙ হং। এ ছাড়া বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।

প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৯%

চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। সংস্থাটি বলছে, করোনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবৃদ্ধি কমে গেলেও বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে বলে মনে করে এডিবি। এ জন্য আবার উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে প্রবাসী আয় কমে গেলে দেশের অভ্যন্তরে ভোগ কমতে পারে, যা এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।

এ বিষয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, কোভিড-১৯-এর ধাক্কার পরও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাঁর মতে, টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বাংলাদেশকে এখন তিনটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। প্রথমত, বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ বাড়াতে হবে। এ জন্য জোর দিতে হবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ব্যাপক সংকটে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ কী শিক্ষা নিতে পারে—এমন প্রসঙ্গও উঠে আসে সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এডিমন গিন্টিং বলেন, কোনো দুর্বল নীতি গ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া কার্যকর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকলে যেকোনো অর্থনৈতিক আঘাত মোকাবিলা করা সম্ভব। এ জন্য দেশের ভেতরে শুল্ক-কর আদায়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে।